প্রখর রোদ উপেক্ষা করে পথচারীর হাতে এবং যানবাহনে জীবাণুনাশক স্প্রে করে যাচ্ছে কয়েকজন কিশোর। তাদের সাথে ১০/১২ বছর বয়স হবে একজন শিশুও রয়েছে। অনেক যানবাহন উপেক্ষা করে যাচ্ছে এমন একজন যাত্রীতো দম্ভোক্তি করে রিকশা চালককে বললেন এই তুমি চলো দাঁড়াতে হবে না।
চলন্ত রিকশায় স্প্রে করায় কিছুটা স্প্রে ছিটকে গিয়ে পায়ের পাতায় লেগে যায়। রিকশার যাত্রী চোখ রাঙিয়ে হুমকি দিলেন ছেলেগুলোকে, পারলে মনে হয় ঘুষি দিয়ে বসেন। স্বেচ্ছাসেবকরা হতবাক বনে গেলেন। দূরে থেকে এক যুবক প্রতিবাদ না করলে বিষয়টি হয়তো খারাপের দিকে যেতে পারতো। কোথায় ধন্যবাদ পাবেন, না হয়ে চোখ রাঙানি জুটছে কপালে।
মিনিট ত্রিশেক দাঁড়িয়ে শুধু কষ্টই বাড়লো। বেশির ভাগ মানুষই চরম অসহযোগিতা করছেন। ইঞ্জিন চালিত রিকশার আধিক্য হওয়ায় অনেক রিকশা বেশ দ্রুত বেগে চলে যাচ্ছে। ছোট্ট ছেলেটি পড়িমরি করে রিকশার গতিরোধ করার চেষ্টা করছেন। কখনো সফল হচ্ছেন, কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছেন। যারা দাঁড়াচ্ছেন তাদের যানবাহনে স্প্রে করে দিচ্ছেন কিশোররা। মোটরবাইক চালকদের কথা বলাই বাহুল্য। ফাঁকা রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে ছুট দিচ্ছেন। তখন স্বেচ্ছাসেবক ছেলেগুলো অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকছেন।
মিরপুর দুয়ারীপাড়া প্রধান সড়কে জীবাণু মুক্তকরণ কাজে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। প্রধান সড়কটির দুই দিকে খুঁটি দিয়ে চিকন করে চেকপোস্টের মতো করা হয়েছে। যাতে প্রত্যেকটি যানবাহনে সঠিকভাবে জীবাণু নাশক স্প্রে করা যায়। কিন্তু যানবাহন চালকদের অসহযোগিতার কারণে তা অনেকটাই ব্যর্থ মনে করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
স্বেচ্ছাসেবক রাশেদ মিয়া জানালেন, 'আপনি নিজেই তো দেখলেন। ওই যাত্রী কেমন ব্যবহার করলো। অনেকেই এ রকম খারাপ ব্যবহার করছে আমাদের সঙ্গে। অথচ তারা যদি একটু সহযোগিতা করতো তাহলে আরো ভালোভাবে করোনা প্রতিরোধ করা যেতো'।
তিনি জানান, স্থানীয় নেতা মইনুল মোল্লার সৌজন্য জীবাণু নাশক পাচ্ছেন। আর তারা কয়েকজন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পালাক্রমে জীবাণুনাশক স্প্রে করে যাচ্ছেন। এই প্রধান সড়কটি দিয়ে দুয়ারীপাড়া ঝিলপাড়, দুয়ারীপাড়া তালতলা, ইস্টার্ণ হাউজিং, বারেকমোল্লা বস্তির লোকজন যাতায়াত করে থাকে। মহল্লাগুলোতে যাতে বাইরে থেকে জীবাণু প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য এই উদ্যোগ।
আশপাশে বেশ কয়েকজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। যে কারণে বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে গেলেই তাদেরকে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। যানবাহনগুলোতে স্যাভলন পানি স্প্রে করা হচ্ছে। পনেরো দিন ধরে চলছে তাদের এই প্রচেষ্টা। কিন্তু ধন্যবাদ থাকলো দূরের কথা, স্প্রে করতে সহায়তা না করে উল্টো চোখ রাঙানি নিত্য সময়কার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলেগুলো বয়সে কম হলেও কয়েকদিনে পথচারীদের এমন আচরণ গাঁ সওয়া হয়ে গেছে। চেষ্টা করছেন বুঝিয়ে যানবাহনগুলোকে জীবাণুমুক্ত করতে। তাদের এই চেষ্টা সফল হলে দুয়ারীপাড়া ঝিলপাড়, দুয়ারীপাড়া তালতলা, ইস্টার্ণ হাউজিং, বারেকমোল্লা বস্তি হয়তো বেঁচে যেতে পারে করোনা থেকে।
লোকজন সহযোগিতা না করে দুর্ব্যবহার করে চলছে কিশোরদের সঙ্গে। স্বেচ্ছাসেবকদের অভিযোগ, স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অকারণে রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরা, বিভিন্ন জায়গায় লোকজন গ্যাদারিং করছে। সিটির শেষ প্রান্ত হওয়ায় প্রশাসনের নজরদারিও খানিকটা ঢিলে-ঢালা। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে গাঁ ছাড়া ভাব স্থানীয়দের মধ্যে। তবে পুলিশ এলে দ্রুত সটকে পড়ছে, পুলিশ চলে গেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছেন।
এলাকাটিতে ত্রাণ সংকটও রয়েছে ব্যাপক। স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, এই এলাকার মধ্যে বারেকমোল্লা বস্তি অবস্থিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগেই নিম্ন আয়ের লোকজন। সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে তাতে তিন-চতুর্থাংশ লোকজন বঞ্চিত রয়েছে। দ্রুত খাবার পৌঁছে দেওয়া না গেলে মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে।