বর্ষায় নৌকা তৈরিই তাদের একমাত্র কাজ

খুলনা, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 22:04:42

নড়াইল: সদর উপজেলার রামসিদি ও ডহর রামসিদি গ্রামে প্রায় কয়েকশ পরিবারের বসবাস। এই দুই গ্রামে নৌকা তৈরি করার ইতিহাস শত বছরের। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৬ মাস নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এখানকার শতাধিক পরিবার। তাইতো এ বছরও বর্ষা শুরু হওয়ার পরে কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক লোকের কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে জমে উঠেছে ওই এলাকার নৌকার হাটটি। আর এই নৌকা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।

জানা গেছে, রামসিদি ও ডহর রামসিদি গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। পূর্ব পুরুষের পেশা ধরে রেখেছে তারা। বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরি করাই যেন তাদের একমাত্র কাজ।

নৌকা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় পোয়াগাছ, উড়িয়াম ও রেইনট্রি গাছের কাঠ। গাছ কেটে হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি করা হয় ছোট-বড় নৌকা।

নৌকা কারিগর সাধন বিশ্বাস জানান, এখানে বিভিন্ন রকমের নৌকা বানানো হয়। বর্ষা মৌসুমে এখানে বিক্রি হয় বিল এলাকায় চলাচলের উপযোগী কালাই-ঢালাই (কালাই-ঢালাই বিল এলাকায় চলাচলের উপযোগী নৌকার নাম) নৌকা।

কারিগর আশিষ বিশ্বাস জানান, বছরের ছয় মাস তারা এই নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাকি ছয় মাস তারা দিন মজুরসহ বিভিন্ন প্রকার কাজ করেন। বর্ষা মৌসুমে তারা সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করেন। এই সময় তাদের ইনকাম ভালো হয়। একজন কারিগর দিনে ৫শ-৮শ টাকা এবং একজন হেলপার ৩শ-৬শ টাকা রোজগার করেন।

খুলনা জেলার তের খাদা এলাকার নৌকা ব্যবসায়ী আমির হোসেন জানান, ২০-২৫ বছর যাবৎ তিনি নৌকার ব্যবসা করেন। এই হাট থেকে নৌকা কিনে তিনি খুলনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি করে থাকেন। লাভও ভালো হয়।

গোপালগঞ্জ থেকে নৌকা কিনতে আসা তাপস সাহা বলেন, ‘শুনেছি এই হাটে নৌকার দাম কিছুটা কম। তাই আমি এখানে নৌকা কিনতে এসেছি। সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি বড় নৌকা কিনেছি।’

ডহর রামসিদি গ্রামের কৃষ্ণ-কালি ও হরি মন্দিরের সভাপতি অমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, নৌকার হাটটি পরিচালনা করে ডহর রামসিদি গ্রামের কৃষ্ণ-কালি ও হরি মন্দিরের ব্যবস্থাপনা কমিটি। মন্দির কমিটি নৌকা ক্রেতাদের কাছ থেকে হাসিল কেটে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ টাকা আদায় করে। তারা এ অর্থ দিয়ে মন্দিরে ধর্মীয় কাজ ও এলাকার হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য ব্যয় করে থাকেন।

ভদ্রবিলা ইউনিয়নের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান শেখ মোশারফ হোসেন জানান, প্রতি সপ্তাহের বুধবার এখানে নৌকা বেচা-কেনার হাট বসে। দীর্ঘদিন যাবৎ রামসিদি গ্রামের মানুষ নৌকা তৈরি করে এবং এ হাটে বিক্রি করে তা দিয়ে সংসার চালায়। এখান থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কোনো টোল নেয় না বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর