বঙ্গোপসাগরে ৭৮ দিন ভেসে থাকার বিভীষিকাময় কাহিনী

, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার | 2023-08-25 04:02:53

টেকনাফ থেকে: বঙ্গোপসাগর দিয়ে অবৈধভাবে দালালদের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রোহিঙ্গা যুবক আনোয়ার মালেকসহ ৫১৫ জন। কিন্তু তারা দুই দফা মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তারপর থেকে শুরু হয় খাবার সংকট, অসুস্থতা ও দালালদের নির্যাতন। খাবার সংকটে প্রায় ৫০ জন মারাও যান। এমন পরিস্থিতিতে বেঁচে ফিরতে পারবেন সে আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন আনোয়ার মালেক।

অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাত্রা পথে ৭৮ দিন বঙ্গোপসাগরে ভেসে থাকার এমনই এক বিভীষিকাময় কাহিনীর বর্ণনা দিয়েছেন রোহিঙ্গা যুবক আনোয়ার মালেক।

বুধবার (১৫ এপ্রিল) টেকনাফের শামলাপুর পয়েন্ট থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। তার অস্থায়ী বাড়ি উখিয়ার জি-১ ক্যাম্পে।

আনোয়ার মালেক বার্তা২৪.কমকে জানান, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে আজ থেকে ২ মাস ১৮ দিন আগে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে প্রথমে দালালদের ফিশিং ট্রলারে উঠেন তিনি। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যসাগরে অবস্থান করা বড় একটি ট্রলারের কাছে। একে একে ৫১৫ জন রোহিঙ্গা ওই ট্রলারে ওঠেন। ৭ দিনের মধ্যে থাইল্যান্ড উপকূলে পৌঁছান তারা। সেখান থেকে দুই দফা মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা চালায় দালাল চক্র। ব্যর্থ হয়ে সেদেশের প্রশাসনের হুমকিতে আবারো তাদের মধ্য সাগরে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর থেকে শুরু হয় খাবার সংকট, অসুস্থতা ও দালালদের নির্যাতন।

তিনি আরও জানান, খাবার সংকটে ৫০ জনের মৃত্যু হয়। শুরু হয় দালালদের সঙ্গে ঝগড়া। এক পর্যায়ে ১২ রাখাইন যুবক পালিয়ে গেলে ট্রলারটি কূলে নিয়ে আশা হয়। তারপর বাংলাদেশ অংশে একটি চরে ট্রলারটি রাখা হয়। সেখান থেকে শামলাপুরের একটি পাহাড়ে লুকিয়ে থাকেন আনোয়ার মালেক। ওই স্থান থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া আরেক রোহিঙ্গা আনোয়ার ইসলাম। তার অস্থায়ী বাড়ি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে। দুই সন্তানের বাবা তিনি। সংসারের অভাব দূর করার জন্য অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মালয়েশিয়ায় তার আর যাওয়া হলো না। ৭৮ দিন বঙ্গোপসাগরে ভেসে থাকার সময়ে দালালদের নিপীড়নে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। বেঁচে ফিরতে পেরে অনেক খুশি আনোয়ার ইসলাম।

বার্তা২৪.কমকে আনোয়ার ইসলাম জানান, ট্রলারে থাকাকালীন এক বেলা খাবার দিলে পরের দুই দিন কোনো খাবার দিত না। খাবার খেতে না পেয়ে অনেকে মারাও গেছেন।

টেকনাফ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর রুবায়েত কবির বার্তা২৪.কমকে জানান, বুধবার রাতে খবর পেয়ে মালয়েশিয়াগামী ৩৯৬ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। সরকারের সিদ্ধান্তে তাদের ১৪ দিনের সঙ্গরোধে রাখা হবে। সেখান থেকে হয়তো রোহিঙ্গাদের স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড-বিজিবির কড়া পাহারার মধ্যেও ঘটছে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাত্রার ঘটনা। বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে টেকনাফের শামলাপুরের হলবনিয়া সাগর পয়েন্টে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা বোঝাই একটি ট্রলার আসে। ওই ট্রলার ও আশপাশের এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯৬ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর