নিকলীতে দুগ্ধ শিল্পে উৎসাহ হারাচ্ছে খামারিরা

ঢাকা, জাতীয়

সাজন আহাম্মেদ, অতিথি লেখক | 2023-09-01 02:40:42

নিকলী (কিশোরগঞ্জ) থেকে: জেলার প্রত্যন্ত হাওর উপজেলা নিকলীতে দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্রের অভাবে স্থানীয় বাজারে নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রয়ে বাধ্য হচ্ছেন খামারি ও কৃষকেরা। দিনের পর দিন লোকসান দেওয়ার কারণে বিপ্লব সম্ভাবনাময়ী দুগ্ধ শিল্প হুমকিতে পড়েছে।

নিকলী উপজেলা সদরের নতুন বাজার, পুরাতন বাজারসহ একাধিক দুধ মহাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বাজারে ৫০-১শ’জন বিক্রেতা দুধ নিয়ে বসে আছেন। প্রত্যেকের পাত্রই ৫-৪০ লিটার ধারণক্ষমতার এবং সবগুলোতেই দুধ রয়েছে। সবাই উৎপাদনকারি। ক্রেতা দেখামাত্রই হৈ হৈ করে এগিয়ে যান দুধ মেপে দিতে। কিন্তু ক্রেতার চাহিদা তো কম, ফলে নিরাশ হতে হয় বিক্রেতাদের।

জানা যায়, স্থানীয় চাহিদার মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে এই অবস্থা। এ কারণে স্থানীয় ক্রেতারাও সুযোগ নিতে ছাড়ছেন না। লিটার প্রতি ৩০-৩৫ টাকা দিকেই দুধ কিনতে পারছেন তারা। কয়েকজন বহিরাগত পাইকারকে দেখা গেল, বাজারদরেরও কমে দুধ ক্রয়ের অপেক্ষার প্রহর গুণতে।

কিশোরগঞ্জ সদরের কর্শাকড়িয়াইল গ্রাম থেকে আসা পাইকার হাসান আলী বলেন, এখান থেকে দুধ কিনে আমি শহরে বিক্রয় করি। প্রতিদিন ৩০-৪০ লিটার দুধ সাইকেলে করে নিয়ে যেতে পারি। ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করে হাজার টাকা থাকে।

কটিয়াদীর সোলেমান মিয়ারও একই বক্তব্য। তিনি তার এলাকায় মাসোহারা ভিত্তিতে গ্রাহকদের দুধ সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, আমাদের সামান্য পুঁজি। নিজের সাইকেলে যতটা পারি বহন করি। এখানে যে দর আর আমার এলাকায় যে চাহিদা, একটা বড় গাড়ি দিয়ে নিতে পারলে ধনী হয়ে যেতে পারতাম।

নিকলী উপজেলা সদরের প্রান্তিক দুধ উৎপাদক আলী হোসেন জানান, গরু কেনার পুঁজির লাভ, ভুষি, ফিড ইত্যাদি খরচসহ শ্রম মূল্য হিসাব করলে লোকসানই। কিছু না করার চেয়ে গাভীটিকে ভর করে কোনো রকম চলছি আরকি! তিনি আরও বলেন, যদি শহর-বন্দরের মতো দর পাওয়া যেতো তবে দুধ উৎপাদনে আমরা বেশি উৎসাহী হতাম।

নাগারছিহাটির জাফরান মিয়া, গিয়াস উদ্দিনসহ একাধিক খামারির একই বক্তব্য। তারা জানান, দুধের বাজারে এমন নিম্নদর থাকায় লোকসান না গুণলেও লাভও দেখছেন না। পরিশ্রম আর পুঁজির ঝুঁকি কমাতে উৎপাদন কমানোর কথাই ভাবছেন এখন তারা।

নিকলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবার জেলা শহরে থাকে। আমি নিজেই সেখানে ৯০-১০০ টাকা দামে দুধ কিনি।

হাওর উপজেলাটিতে পর্যাপ্ত চারণ ভূমি গো পালনে বিশাল সম্ভাবনার। তাই দিন দিন দুধ উৎপাদন বাড়ছে। ব্র্যাক বা মিল্কভিটার মতো বড় কোনো কোম্পানির ক্রয় কেন্দ্র এ এলাকায় স্থাপন করা হলে দুধ উৎপাদনে এ উপজেলায় বিপ্লব ঘটানো যেতো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর