করোনা মোকাবিলায় ৮ প্রস্তাব বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীদের

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 03:25:11

জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকারকে আট দফা প্রস্তাব দিয়েছেন বুদ্ধিজীবী ও বিশেষজ্ঞরা।

শিক্ষক, চিকিৎসক, লেখক, গবেষক ও শিল্পী সমাজের পক্ষ থেকে বুধবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, তিন মাসব্যাপী ত্রাণ সরবরাহ, কর্মহীনদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, সামাজিক সচেতনতা তৈরি, গৃহহীন এবং একেবারে বসবাস অযোগ্য স্থানে বসবাসকরীদের জন্য সরকারি স্থাপনায় থাকার ব্যবস্থা, সব নাগরিকের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও কৃষকদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

এসময় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিভিন্ন ত্রুটি, অবহেলা এবং সংকট পরিস্থিতি বিশদ আকারে তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রস্তবনা পাঠের পর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তরের পাশাপাশি বর্তমান সংকট ও বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন শিক্ষক ও গবেষক অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান, মোশাহিদা সুলতানা, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক ফিরোজ, উন্নয়ন ও অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা এবং প্রকৌশলী ও গবেষক অনুপম সৈকত শান্ত। সঞ্চালনা করেন সামিনা লুৎফা।

লিখিত বক্তব্যে আনু মুহাম্মদ বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, যেসব দেশের সরকার করোনা মোকাবিলায় তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, দেশের নাগরিকদের ন্যূনতম খাদ্য আশ্রয়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছে এবং যেসব দেশে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার দৃঢ় ভিত্তি আছে, এ সংকট মোকাবিলায় তারাই সাফল্য দেখিয়েছে। এ তিনটি ক্ষেত্রেই দুর্বলতা, শৈথিল্য, অমনোযোগ ও যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকার অভাবে বাংলাদেশ অনেক বেশি হুমকির সম্মুখীন। এ অবস্থায় আমরা শিক্ষক, চিকিৎসক, গবেষক, লেখক, শিল্পী ও সংগঠকদের একটি দল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান, মতবিনিময়, দেশ-বিদেশের পরিস্থিতি ও গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে করণীয় বিষয়গুলো নির্ধারণ করে তা দেশের সর্বস্তরের মানুষ ও সরকারের কাছে উপস্থাপন করছি।

মাহা মির্জা বলেন, মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান এ ন্যূনতম চাহিদাগুলো আগে নিশ্চিত করতে হবে। অনেকে বলেন, আমাদের মতো দরিদ্র দেশের পক্ষে এসব কিছু সম্ভব না। কিন্তু যদি আমরা কিছু মেগা প্রজেক্টের খরচ দেখি, তাহলে অবাক হয়ে যাব। অথচ আমরা আমাদের বাজেটের এক শতাংশেরও কম জনস্বাস্থ্য খাতে খরচ করি। আমরা যদি বাঁচতে চাই তাহলে ভবিষ্যতে অগ্রাধিকারগুলো ঠিক করতে হবে। কৃষকের যে ফসল নষ্ট হচ্ছে, সরকার তা কিনে নিয়ে অসহায় কর্মহীন ও দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করাই এখন অন্যতম জরুরি কাজ।

ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমাদের সক্ষমতা ছিল না, এটা সত্য না। কয়েকদিন হলো ২৭টি স্থানে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু শুরুতে একটি মাত্র কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা করা হতো। তাহলে বাকি ২৬টি কেন্দ্রে যে এখন হচ্ছে, এসব স্থানে কি যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীন এসে করে দিয়ে গেছে? না। এ জনবল যোগ্যতা সবই বাংলাদেশের ছিল। কিন্তু সমন্বয়হীনতা, চিন্তার অভাবে রোগী চিহ্নিত করা যায়নি। যদি মানুষ প্রথম থেকেই দেখত যে তাদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা আছে, তাহলে দেশব্যাপী এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

অনুপম সৈকত শান্ত বলেন, সরকারি হিসেবে গত ৮ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১১০ জন।

আট প্রস্তাবনা ও দাবির মধ্যে রয়েছে-

১. কর্মহীন, মানুষদের (মজুর, বেকার, ক্ষুদে ব্যবসায়ী) ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী, নগদ অর্থ ও ত্রাণ পৌঁছানো।

২. সব শিল্প ও প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারী, পেশাজীবীদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে, ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে, ছুটিকালীন মজুরি দিতে হবে।

৩. কোভিড-১৯ সহ সব রোগের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বতন্ত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে, প্রতি জেলায় ল্যাব স্থাপন করে টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত পিপিই দিতে হবে তাদের। আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউজগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. সব কৃষক ও খামারির পণ্য বাজারজাতকরণ এবং যুক্তিসঙ্গত দামে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। সরাসরি কৃষক ও খামারির কাছ থেকে সরকারের খাদ্য পণ্য কেনার পরিধি বাড়াতে হবে। কৃষককে স্বল্প সুদে দেয়া ঋণের পরিধি ও পরিমাণ বাড়াতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকার, ব্যাংক ও এনজিও প্রদত্ত ঋণের সব কিস্তি স্থগিত করতে হবে।

৫. মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় অবাধ তথ্য প্রবাহ এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৬. দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে, বাজারে খাদ্যদ্রব্য সহ প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। মজুতদার, চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলতে হবে। সারাদেশের চালচোর, ত্রাণচোরদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।

৭. জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও গবেষণা বাড়াতে হবে।

৮. দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়ন দর্শনে মৌলিক পরিবর্তন আনা অপরিহার্য। জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং মুনাফামুখী তৎপরতা, জৌলুস ও ভবন, ব্যক্তিগত গাড়ি ও ভোগবিলাসকে উন্নয়ন হিসেবে দেখা যাবে না। জনগণের জীবন ও নিরাপত্তাকেই উন্নয়নের প্রধান শর্ত হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর