কেমন গেলো ধরিত্রী দিবস মাতা বসুমতীর

, জাতীয়

মাহমুদ মেনন, সাংবাদিক ও শিক্ষক | 2023-08-29 17:14:25

বুধবার (২২ এপ্রিল) ছিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। কোভিড-১৯ মহামারির মাঝে কেমন ছিল দিনটি। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাস ধরিত্রীর শত শত কোটি মানব সন্তানকে করেছে ঘরবন্দি। ফলে এই দিন রাস্তাগুলোতে চলেছে সামান্যই গাড়ি, আকাশে ওড়েনি কোনো মোষগোঙ্গানো আকাশদানো। কারখানা চলেনি। ওড়েনি কালো ধোয়া। গ্রিনহাউজ গ্যাসেরও ছিলো না কার্বন নিঃসরণ। ফলে ধরিত্রীমাতা ছিলো স্বস্তিতে। তার কাঁধে ছিলো না এত মানুষের বোঝা।

লেথারব্যকে সমুদ্র কচ্ছপগুলো আরো অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর সাথে করেছে অবাধ সন্তরণ। থাইল্যান্ডের সমুদ্র সৈকতগুলোতে লাল কাঁকড়ারা বালু খুড়ে ঢিবি বানিয়েছে, করেছে কত আঁকিবুঁকি। সে শিল্পকর্ম পায়ের নিচে দলে দিয়ে যায়নি কোনো বেকুব পর্যটক। একই কথা প্রযোজ্য কক্সবাজারে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের ক্ষেত্রেও। খবর হয়েছে ভারতের কোনো কোনো অংশ থেকে এবারের ধরিত্রী দিবসে হিমালয়চুড়া চোখে পড়েছে, গত কয়েক দশকেও তা দেখা যায়নি একটিবার। অন্য প্রাণীকুল কোনো দেশের ক্যাঙারু, কোনো দেশের ছাগল-গরু অবাধের বিচরণ করেছে চারণভূমিতে।

নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)’র মহাকাশ বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট থেক পাওয়া ড্যাটায় দেখেছেন চীন থেকে নাইট্রোজেন নিঃসরণ নাটকীয় মাত্রায় কম হয়েছে এবারের ধরিত্রী দিবসে। রাস্তার গাড়িগুলোই মূলত নাইট্রোজেন নিঃসরণের মূল উৎস। এসা’র স্যাটেলাইট কোপার্নিকাস বার্তা পাঠিয়েছে উত্তর ইতালির দিকটাতেও নাইট্রোজেন নিঃসরণ অনেকটা কমে গেছে। স্মোগ বা ধোঁয়াশার জন্য কুখ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসেও একই চিত্র দেখতে পেয়েছে নাসা।

এসবতো স্যাটেলাইটের ড্যাটা। খালি চোখে কেউ যদি প্রকৃতির পরিবর্তনটা দেখতে চায় তাহলে ভ্যানিসের খালগুলোর দিকে চোখ ফেলতে হবে। খালের নগরী খ্যাত ভ্যানিসে খাল এখন এতটাই পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে খালি চোখেই দেখা যায় পানির মধ্যে মাছগুলোর অবাধ শান্ত সাঁতার।

কিছু কিছু প্রাণী তাদের খাবারের জন্য মানুষের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলি অবশ্য এখন একটু বিপাকে পড়েছে। ঢাকার রাস্তার কুকুরগুলো, হোটেল রেস্তরার উচ্ছিষ্ট খাবারে বেঁচে থাকে, সেই খাবার এখন নেই। তবে জাপানের নারা পার্কের হরিণগুলোরও একই দশা। দর্শনার্থীরা মিল টিকেট কিনে হরিণগুলোকে খাওয়াতো আর আমোদে হাসতো। কিন্তু এখন সে খাবার আর জুটছেনা নিরীহ প্রাণীগুলোর। ফলে সেগুলো পার্ক ছেড়ে উঠে এসেছে সড়কে। ফাঁকা রাস্তায় এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করছে কিছু খাবারের সন্ধানে। কোনো কোনোটি লোকালয় পর্যন্তও এসে পড়ছে, কিন্তু খাবার পাচ্ছেনা বললেই চলে।

হরিণগুলো নিরীহ বলে চুপচাপ সয়ে যাচ্ছে কিন্তু থাইল্যান্ডের বানরগুলো! ওগুলোকেও খাবার দিতো দর্শনার্থীরা। কিন্তু এই সময়ে তা জুটছে না। ফলে রাস্তায় এখানে ওখানে ছুটছে। খাবার না পেয়ে আবার নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি, মারামারিও জুড়ে দিচ্ছে এই বানরগুলো।

লকডাউনে কার্বন নিঃসরণও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। চীনের আবহাওয়ায় সিওটু গ্যাসের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম রেকর্ড করা হয়েছে। আর গোটা বিশ্বেই এই সিওটু গ্যাস নিঃসরণ এ বছরের প্রথমাংশে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কমেছে।

সবমিলিয়ে এবারের ধরিত্রী দিবসটি ভালোই কেটেছে মা বসুমতীর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর