রোহিঙ্গাদের ঘরে এলপি গ্যাস, কমেছে বন উজাড়

চট্টগ্রাম, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 06:10:13

কক্সবাজার: মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থান এখন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে। বিদেশি ও দেশীয় এনজিওদের সঙ্গে নিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার দেখভাল করছে বাংলাদেশ সরকার। এ সংকটের শুরু থেকে পরিবেশ ও বনায়ন ধ্বংসের অভিযোগ করে আসছিল পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। এ সংকটের ১১ মাসের মাথায় জ্বালানিতে পরিবর্তন আনে সরকার। বর্তমানে রোহিঙ্গারা কাঠ নয় গ্যাস ব্যবহার করছে। যার ফলে পরিবেশ যেমন বাঁচবে তেমনি বাঁচবে সরকারের সামাজিক বনায়ন।

বন-বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করত প্রায় ১০ হাজার টন কাঠ। যার বেশিরভাগই আসত উখিয়া-টেকনাফের সামাজিক বনায়ন উজাড় করে। উখিয়া-টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা প্রায় ৫ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমিতে ১ লাখ ৬৫ হাজার ঝুপড়ি নির্মাণ করে আশ্রয় নিয়েছে। এ বিপুল বনভূমি উজাড় হওয়ায় ৩৯৭ কোটি ১৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯৩ টাকার সমপরিমাণ জীববৈচিত্র্য ও বনসম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে গত এক মাস ধরে রোহিঙ্গাদের জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে এসব এলপি গ্যাস ও চুলা দেয়া হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গারা যেমন খুশি তেমনি কমেছে জ্বালানি কাঠের চাহিদা। পাশাপাশি কমেছে বন উজাড়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে এলপি গ্যাস ও চুলা দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত ২৭শ বাংলাদেশি পরিবারকে এ গ্যাস দেয়া অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থার মাধ্যমে সামনে নতুন প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। যাতে সকল রোহিঙ্গা পরিবার এ গ্যাসের সুবিধা পায়।

কুতুপালং ১ ক্যাম্পের বি ব্লকের ৪ নং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা জমির উদ্দিন বলেন, ‘আগে রান্নার জন্য আমরা গাছ কেটে ফেলতাম। কিন্তু এখন আর তা করা লাগে না। কারণ আমাদেরকে এখন গ্যাস দেয়া হচ্ছে। গ্যাসে রান্না করতেও সুবিধা। তাই আমরা গ্যাস ব্যবহার করছি।’

বালুখালী ১ ক্যাম্পের সি ব্লকের রোহিঙ্গা হামিদা বেগম বলেন, ‘কাঠ দিয়ে রান্না করতে খুব কষ্ট হতো। তাছাড়া কাঠ আনতে যেতে হতো। গ্যাসে রান্না করতে সুবিধা, তাই এখন আর কাঠে রান্না করা হয়না। কাঠ আনতেও যেতে হয়না। প্রতি মাসে এখানে গ্যাস ও চুলা দেয়া হচ্ছে।’

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলছেন, প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারকে যদি জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস দেয়া হয় তাহলে পরিবেশ বাঁচবে। পাশাপাশি তাদের গাছ না কাটার জন্য পরামর্শ দিতে হবে।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ‘শুনেছি রোহিঙ্গাদের জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস দেয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি এ কর্মসূচি যদি সকল রোহিঙ্গাদের মাঝে দেয়া হয় তাহলে ইতোমধ্যে যে পরিবেশ নষ্ট হয়েছে সেটি ফিরে আসতে পারে। রোহিঙ্গারা ধারাবাহিকভাবে গাছ কেটে ফেলায় উখিয়া-টেকনাফের প্রাকৃতিক পরিবেশ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহারে সরকারের আরও গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।’

কক্সবাজার সিভির সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বার্তা২৪.কমকে জানান, গত ১১ মাসে রোহিঙ্গা শিবিরে আমূল পরিবর্তন এনেছে সরকার। যার মধ্যে অন্যতম জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করা। হয়তো আগামীতেও ভালো সুফল পাবে সরকার। যদিও একটু ঝুঁকি রয়েছে। কারণ রোহিঙ্গাদের অনেকে গ্যাস ব্যবহার করতে জানে না। তাদের এ বিষয়ে পরামর্শ দেয়া প্রয়োজন।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জমান বার্তা২৪.কমকে জানান, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে গিয়ে রোহিঙ্গারা যেভাবে বন উজাড় করে আসছিল সেটা অনেক কমে গেছে। এলপি গ্যাস ও চুলা বিতরণ শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গারাও গ্যাসে রান্না করছে। আশা করা যাচ্ছে আগামীতে বন উজাড় শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর