করোনায় বেড়েছে রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের দুর্দশা

, জাতীয়

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-25 17:09:54

সারাবিশ্বে চলছে মহামারী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) তাণ্ডব। বিশ্বের প্রায় সব মানুষই লকডাউন হয়ে গৃহবন্দি। আর এই করোনা আতংকের প্রভাব পড়েছে রানা প্লাজা ধসের নিহত পরিবারের সদস্য ও আহতদের স্বাভাবিক জীবনে। করোনায় বেড়েছে আরও দুর্দশা।

করোনাভাইরাসের করাল গ্রাস থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে ৫ম বারের সরকারি ছুটির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এতেই চরম বিপাকে পড়েছে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকরা। হাতের কাজ ও ছোট ছোট ব্যবসা করে যারা ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছেন তারাও আজ আয় রোজগার শূন্য। করোনা নামক দানব কেড়ে নিয়েছে তাদের মুখের খাবার। এখন তাদের জনপ্রতিনিধিদের মুখের দিকে।

শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজন শ্রমিকের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাদের অনেকই হারিয়েছেন কর্মক্ষমতা। দু'বেলা দু'মুঠো ঠিক ঠাক খাবার জোটে না তাদের। যতটুকু খেতে পারতো তাও বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ করে দিয়েছে সামান্যতম আয়ের পথ।

ময়না কাজ করতেন রানা প্লাজার ৭ তলায়। ভবন ধসের তিনদিন পর উদ্ধার কর্মীরা তাকে উদ্ধার করা হয়েছিলো। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, রানা প্লাজা ধসে কোনো মতে বেঁচে গেছি। কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি কাজ করার ক্ষমতা। এখন নিজের বাসায় কোনমতে সেলাইয়ের কাজ করে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা হতো। এখন তাও বন্ধ।

আরেক আহত শ্রমিক সুমা বলেন, মানুষের বাসায় কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাই। করোনাভাইরাসের কারণে তারা এখন নিজেদের কাজ নিজেরাই করে। সবকিছু তো বন্ধ হয়ে গেছে, আমরা এখন কি খাবো, কোথায় যাবো। ত্রাণের লিস্টে নাম লেখাতে গেলে নাকি এখানকার ভোটার হতে হবে। আজকের এই দিনটির কথা মনে পড়ে আরও কষ্ট বাড়লো কয়েক হাজারগুণ।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ছেলে হারানো মা সরবানু। তিনি বলেন, ৬ বছর আগে উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়েছি। আজকের এই দিনে রানা প্লাজার সামনে গিয়ে আমার ছেলের পরশ খুঁজি এবার তাও হলো না। করোনা ছেলে হারানোর ব্যথা আরো বাড়িয়ে দিলো। আল্লাহ যেন আমার ছেলের হত্যাকারীর বিচার করেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, রানা প্লাজার আহত ও নিহতের পরিবারে করোনার প্রভাব পড়েছে। তাদের এখন আয় রোজগারের সকল পথ বন্ধ। দুর্দশাও বেড়েছে তাদের। তারা শুধু তাকিয়ে আছে শ্রমিক সংগঠনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মুখপানে। গতকাল ২৩ এপ্রিল জনপ্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করেন। যা আজ শ্রমিক সংগঠন গুলো বণ্টন করে দেবে।

উল্লেখ্য, দেশের পোশাক খাতের ইতিহাসে মর্মান্তিক এক কালো অধ্যায়ের নাম রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি। ২০১৩ সালের এই দিনে সাভারে নয় তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হন। আহত হন প্রায় তিন হাজার। এদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আর নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি ছয় বছরেও।

এ সম্পর্কিত আরও খবর