পাটবীজ নিয়ে এসে দেশে যেতে পারছেন না ৬১ ভারতীয় ট্রাক চালক

, জাতীয়

নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট | 2023-08-18 02:52:11

বিশেষ ব্যবস্থায় বুড়িমারীতে পাটবীজ নিয়ে এসে আটকে পড়েছেন ভারতীয় ৬১ ট্রাকচালক। বাংলাদেশ থেকে তাদের ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় দূতাবাসকে চিঠি পাঠালেও সাড়া দেয়নি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। যার ফলে এসব ট্রাকচালকরা করোনাভাইরাসের কারণে পরিবার-পরিজনের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

সরেজমিনে শনিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১টায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের দেয়াল ঘেরা চত্বরে দেখা গেছে, একটি ট্রাকে কেবিনে বসে নামাজ শেষে দুই হাত তুলে অঝোরে কেঁদে কেঁদে প্রার্থনা করছেন। তার নাম ইজাহার আলী। বাড়ি ভারতের বিহার রাজ্যের মতিহার জেলার পশ্চিম চম্পারণ। নামাজ শেষে তার কাছে জানা গেল— তাদের দুর্দশার কথা।

তিনি জানান, স্ত্রীকে একদিনের কথা বলে মহাজনের গাড়িতে পাটবীজ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ট্রাক খালি করে চেকপোস্টে গেলেই গাড়িগুলো দেয় আটকে। লকডাউনের কারণে ঢুকতে দেওয়া হয়নি ভারতে। বাড়িতে তার একমাত্র ছেলে ও স্ত্রী থাকে। সেদিন রাতেই খবর এলো স্ত্রী’র কোমর ভেঙে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি করেছেন তার ছেলে। চিকিৎসার জন্য ধার দেনা করে মায়ের ওষুধ কিনে দিয়েছেন। কিন্তু ঘরে খাবার নেই। ইজাহার আলী বলেন, আমরা মুসলিম, রমজান মাসে তারাবি নামাজ না হলে রোজা রাখা হয় না। তাহলে আমারা কি নামাজ-রোজা সব বন্ধ করে দিব। না খেয়ে মরে যাবো। দেশের মুখ দেখবো না।

তার মতো আরও ৬১ জন ট্রাকচালক এখন আটকে আছেন লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে। গত ৪ এপ্রিল বিশেষ অবস্থায় পাটবীজ নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছে বিষয়টি জানিয়েও কিছুই হচ্ছে না। ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দর চত্বরে ২২ দিন ধরে খাওয়া-ঘুম সবকিছুই ট্রাকে করছেন।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর গত ২২ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে আমদানি করা ৬১টি পাটবীজের ট্রাক আটকা পড়ে ভারতে। এরপর অজ্ঞাত কারণে আরও ৩ দিন বন্ধ থাকার পর বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ৪ এপ্রিল ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ওই দিনই ট্রাক খালি করে সেগুলো ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ফেরার সময় বাধা দেয় ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তখন থেকে ৬১টি ভারতীয় ট্রাক আটকে আছে বুড়িমারী স্থলবন্দরে।

ভারতের ট্রাকচালক আলতাফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সরকার অনেক চেষ্টা করছে আমাদের দেশে পাঠানোর জন্য। কিন্তু ভারত সরকার আমাদের দিকে দেখছেন না। আমাদের পরিবারের কথা ভাবছেন না। মমতা দিদি আমাদের দিকে তাকালে আমারা দেশে ফিরতে পারি। এভাবে থাকলে আমরাসহ আমাদের পরিবার মরে যাবে। দ্রুত আমাদের দেশে ফিরে নিন।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ভারতীয় দূতাবাস ও কোচবিহারের ডিএমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো সাড়া নেই। তাই করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের রাখা হয়েছে স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে। তাদের দেশে পাঠানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর