বড় বাপের পোলায় খায়/ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়। প্রথম রমজানের দুপুর থেকেই রাজধানীর পুরান ঢাকার চক বাজারের ইফতারের বাজার এমন হাঁকডাকে সরগরম করতে থাকে। উপচে পরা ভিড় ঠেলে রোজাদাররা ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রী কিনে ঘরে ফেরেন। ইফতার বিক্রিকে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতার চাঞ্চল্যতায় এক অন্য রকম আবহের সৃষ্টি হয়।
শুধু চকবাজার নয় রাজধানীর প্রায় সব অলিতে-গলিতে কিংবা অভিজাত ও নামকরা রেস্তোরাঁর সামনেই বসে বাহারি ইফতারের আয়োজন। বিকেল থেকেই মাথায় টুপি- পাঞ্জাবি পরে ক্রেতাদের অস্থায়ী এসব দোকান থেকে ইফতার কিনতে দেখা যায়। তেমনি, নিজেদের ইফতারের দোকানের প্রতি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা সুরে হাঁকডাক ছাড়েন বিক্রেতারা।
একাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রমজানই ছিলো ঢাকাবাসীর জন্য এমন। কিন্তু এবারের রমজান ঢাকা তথা দেশবাসীর কাছে কেমন যেন অচেনা! চকবাজারের হাঁকডাক আর ভিড় ভাট্টা তো নেই, লকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে অভিজাত রেস্তোরাঁসহ মৌসুমী অস্থায়ী ইফতারের দোকানগুলো।
বুট, বুরিন্দা, চপ, পিঁয়াজু, ছোলা, হালিমসহ নানা পদের কাবাবের বাহারি স্বাদ ছাড়াই অধিকাংশ মানুষের ইফতার সম্পন্ন হচ্ছে।
রমজানের প্রথম দিন শনিবার ঢাকার ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, এলিফেন্ট রোড ও শাহবাগসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে কোথাও এমন অস্থায়ী ইফতারের বাজার চোখে পড়েনি। তবে নগরীর প্রধান সড়কগুলোর পাশে অস্থায়ী দোকান না থাকলেও মহল্লার ভেতরের দিকে খুবই অল্প পরিসরে দেখা গেছে শুকনো মুড়ি ও খেজুরের দোকান।
ধানমন্ডি ১৫ নম্বর এলাকায় স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে এমন এক দোকানির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রতি বছর আমি মৌসুমী ইফতারের দোকান করি। এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটা হলো না। তাই মুড়ি আর খেজুর নিয়ে বসেছি। যদিও পুলিশ দেখলে তুলে দিতে পারে।
প্রতি বছর বাহারি ও মজাদার খাবার দিয়ে ইফতার করে থাকেন আল মামুন সুইট। তিনি আফসোস নিয়ে বলেন, ইফতারিতে আমার হালিম চাই-ই, চাই! অথচ এবার সেটা পাবো না, দোকান বন্ধ থাকায়। বাড়িতে থাকলেও হয়তো পরিবারের অন্যরা করে দিত।
করোনার সময়গুলোতে লকডাউন চলায় বদলে গেছে পরিস্থিতি। রমজানের বাহ্যিক উদযাপন ও চিরচেনা আবহ নেই একবারেই। করোনাকালে রমজানের সংযমী বার্তা যেন আরো বেশি দৃঢ়তা নিয়ে এসেছে এবার। তাই ঐতিহ্যের ইফতার ছাড়াই আজ রোজার দ্বিতীয় দিন পার করবে ঢাকাবাসী।