বরিশাল: বরিশালে ক্রমশই বেড়েই চলেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। গত এক মাসে বরিশালে ২০টি আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে। তবেই এই আত্মহত্যার প্রবণতার মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পরিবারিক কলহ ও প্রেম প্রতারণা জনিত কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। অবশ্য আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য সামাজিক অবক্ষয় এবং বিদেশী সংস্কৃতিকেই দায়ি করছে বিশেষ মহল।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের গত এক মাসে বরিশাল মহানগরী এবং বরিশাল জেলাসহ আশ-পাশের অঞ্চলে প্রায় অর্ধশত আত্মহত্যার চেষ্টা’র ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ২০ জন নারী ও পুরুষ আত্মহত্যায় মারা গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
এছাড়াও এই বছরের গত ৭ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত আত্মহত্যার চেষ্টা করা ১৩ জন নারী-পুরুষের শেবাচিম হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবার কেউ হাসপাতালে পৌঁছার আগেই মারা যায়।
বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলায় ৭টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তাদের তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যু হয়েছে। পরে শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে তাদের মৃত দেহের ময়না তদন্ত করা হয়।
শেবাচিম হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিরা হলো- নলছিটির জুলেখা বেগম (২২), বরগুনার জমুনা বেগম (৩০), বাবুগঞ্জের মাধবপাশার লাইজু (২৫), বরগুনার ছালমা আক্তার (২২), পিরোজপুরের বাদশা (৭৫), বাউফলের মনিকা (৩০), বরগুনার তানিয়া আক্তার (৩০), নগরীর কাউনিয়া ব্র্যাঞ্চ রোডের অর্পিতা (২২), বানারীপাড়ার হাসি বেগম (২৪), মঠবাড়িয়ার কৃষ্ণ কান্ত (৬০), নগরীর নবগ্রাম রোড এলাকার রহিমা বেগম (১৯), বরগুনা পৌর এলাকার জেসমিন আক্তার (২৬) ও উজিরপুরের রোজী বেগম (২৪)।
এছাড়া ৭ জনের বেশি আত্মহত্যাকারী নারী-পুরুষকে ময়না তদন্তের জন্য বিভিন্ন থানা পুলিশ সরাসরি শেবাচিমের মর্গে নিয়ে আসে।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক মাসে তুলনায় গত জুন ও জুলাই মাসে আত্মহত্যায় মৃত্যুর ঘটনা কম। তবে ওই দুই মাসে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে তুলনামুলক বেশি।
জরুরি বিভাগের ভর্তি রেজিস্ট্রারে দেখা যায়, গত এক মাসে বরিশাল নগরী সহ জেলার ১০ উপজেলায় প্রায় অর্ধশত আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। যাদের মধ্যে ১৩ জন বাদে বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
আত্মহত্যার চেষ্টাকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবারে স্বামী-স্ত্রী বিরোধ কিংবা সংসারে অস্বচ্ছলতার কারণে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। আবার প্রেম প্রতারণা এবং পরকীয়া আবার স্বামীর পরকীয়া’র প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
আত্মহত্যার চেষ্টা করা ১৮ বছরের নিচে কয়েকজন মেয়ের পরিবার দাবী করেছে লেখাপড়ার চাপ এবং সদ্য প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল না হওয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তবে সে সংখ্যা খুবই কম। প্রেম প্রতারণা ও পারিবারিক কলহ থেকে আত্মহত্যার ঘটনাই বেশি ঘটছে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে,সামাজিক অবক্ষয় এবং বিদেশী সংস্কৃতি’র প্রভাবেই আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ি। তারা মনে করেন, বিদেশী টিভি সিরিয়াল নারীদের আত্মহত্যার পথে নিয়ে যাচ্ছে। একজন মানুষ যখন তার জীবনের সঙ্গে পেরে উঠছে না এবং মারাত্মক ভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে তখনই আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
তবে প্রতিটি মানুষই গলায় ফাঁস বা বিষপানের পরে বাঁচার জন্য শেষ চেষ্টা করে বলেও জানিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের মানসিক বিভাগের চিকিৎসকরা।