গোপালগঞ্জে ঢাকা ফেরত স্বাস্থ্যকর্মী ঝুপড়ি ঘরে সঙ্গরোধে

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গোপালগঞ্জ | 2023-08-23 02:28:02

করোনা সন্দেহে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় এক স্বাস্থ্যকর্মীকে নির্জনস্থানে শুকনো পুকুরের মধ্যে তালপাতার ঘরে সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টিন) রাখা হয়েছে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এই নারী স্বাস্থ্যকর্মী ওখানে অবস্থান করছেন। গত ১ সপ্তাহ আগে ঢাকার একটি হাসপাতালে চাকরিরত ওই স্বাস্থ্যকর্মী গ্রামে আসলে এলাকাবাসী তাকে ঝুপড়ি ঘরে কোয়ারেন্টিনে রাখেন। এ ঘটনাটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর গোটা উপজেলায় আলোচনার ঝড় ওঠে।

জানা যায়, ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চাকরিরত ওই স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছুটি পেয়ে গত মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) কোটালীপাড়ার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখন্ডা গ্রামের নিজ বাড়িতে আসেন । খবর পেয়ে এলাকাবাসী তার বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে একটি নির্জন স্থানে পুকুরের ভিতর তালপাতা দিয়ে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে তাকে সঙ্গরোধে (কোয়ারেন্টিন) রাখে।

ভুক্তভোগী ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আমি এখানে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। একজন স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি অনেক মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছি। আর আজ এখানে থেকে আমার স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষ যে এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা আমার জানা ছিল না।

নির্জনস্থানে শুকনো পুকুরের মধ্যে তালপাতার ঘরে সঙ্গরোধে

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মা বলেন, আমার স্বামী নেই। এই মেয়েটার আয়ে আমার সংসার চলে। মেয়েটির এখনো বিয়ে হয়নি। তাকে এভাবে একটি পুকুরের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে রাখা হয়েছে। আমার মেয়েটির যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নিবে? আমি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুশান্ত বৈদ্য বলেন, ওই স্বাস্থ্যকর্মী বাড়িতে আসার পরে আমাকে তার পরিবার বিষয়টি জানায়। আমি তাকে একটি আলাদা ঘরে রাখতে বলেছিলাম। কিন্তু ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে যে এলাকাবাসী পুকুরের মধ্যে একটি ঝুপড়ি ঘরে রেখেছে তা আমার জানা ছিল না।

কোটালীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ লুৎফর রহমান জানান, তারা ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে দিয়ে এসেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। এই স্বাস্থ্যাকর্মীকে এলাকাবাসী এভাবে না রেখে আমাদের জানালে তাকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারতাম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর