করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন লালমনিরহাটের মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, ত্রাণ শাখা ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ঝুঁকি জেনেও দায়িত্ব পালন থেকে পিছপা হচ্ছেন না তারা।
মূলত পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পরে করোনা আক্রান্ত রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। নিজেদের সুরক্ষায় পিপিই পরে সন্দেহজনক রোগীর নমুনা নিতে বিভিন্ন এলাকায়ও যাচ্ছে চিকিৎসক টিম। তবে তাদের সঙ্গে থাকা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কপালে পিপিই জুটছে না। এতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
শুধু তাই নয়, লকডাউনে ঘরে থাকা মানুষদের কাছে খাদ্য পৌঁছে দেয়া ত্রাণ শাখার কর্মীদের সরকারিভাবে একটি মাস্কও সরবরাহ করা হয়নি। তারা নিজেদের উদ্যোগে মাস্ক পরেই সেবা দিচ্ছেন। খাদ্য বিভাগের গুদাম কর্মকর্তাদেরও একই অবস্থা। এ ঝুঁকি থেকে বাদ পড়েননি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তরাও। লকডাউনের কারণে তাদের কাজের পরিধি বেড়েছে।
এ সংকটময় মুহূর্তে মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, ত্রাণ শাখা ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ যারা জরুরি সেবা দিচ্ছেন তারাও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন পিপিই পরা ছাড়াই। ফলে সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসব জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী আইসোলোশনে আছেন। এরপরও নেই সতর্কতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ত্রাণ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘পিপিই তো দূরের কথা আমাদের জন্য একটি মাস্ক বা গ্লাভস পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়নি। জীবন বাঁচাতে নিজেরাই মাস্ক সংগ্রহ করে যথাসম্ভব সাবধানতার সঙ্গে মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছি। যা অনিরাপদ।’
ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ত্রাণ শাখার একজন কর্মচারীর মৃত্যু ও দুই কর্মকর্তা সপরিবারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তাই দ্রুত পিপিই সরবরাহ করার আহ্বান জানান তিনি।
পুলিশের একজন পরিদর্শক বলেন, ‘চিকিৎসকরা পিপিই পরে শুধুমাত্র রোগীর সেবা দিচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা সর্বস্তরের জনগণকে সেবা দিচ্ছেন। অথচ তারা জানেন না কে আক্রান্ত। পুলিশকে লকডাউনে থাকা পরিবারগুলোর কাছে যেতে হচ্ছে। সুস্থ-অসুস্থ সব ধরনের মানুষ সেবা নিতে প্রতিনিয়ত থানায় আসছেন। ত্রাণ বিতরণ, জনসচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সঙ্গরোধ ও লকডাউন নিশ্চিত, মরদেহ দাফন ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ সব কাজে পুলিশ সম্পৃক্ত। মাস্ক ও রেইনকোট পড়ে এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পুলিশ।’
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বার্তা২৪.কমকে জানান, ৮ শতাধিক পুলিশ সদস্যের জন্য ইতোমধ্যে ১শ পিপিই তৈরি করা হয়েছে। সরকার থেকে পর্যায়ক্রমে তাদের আরও পিপিই দেয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বার্তা২৪.কমকে জানান, মাঠ প্রশাসন, ত্রাণ ও খাদ্য বিভাগসহ সব জরুরি সেবা প্রদানকারীরা শুধু মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছেন। প্রয়োজন হলেও সরবরাহ না থাকায় তাদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।