করোনা: প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দিলেন মুচি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-24 21:32:36

করোনার প্রভাবে খাবার সংকটসহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষরা।

অসহায় দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের আহাজারিও বাড়ছে প্রতিদিন। কঠিন এই দুঃসময়ে সরকারি সহযোগিতা ছাড়াও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ তৎপরতা চলছে।

ইতোমধ্যে বিত্তবানদের পাশাপাশি সহায়তার হাত বাড়ানোর বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেরপুরের ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন। ভিক্ষা করে জমানো ১০ হাজার টাকা দুস্থদের মাঝে দান করেছেন তিনি। মাটির ব্যাংকে জমানো টাকা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন স্কুল ছাত্ররাও। এমন মানবিক মানসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবার এই দুর্যোগে অসহায় মানুষদের জন্য জুতা রং ও সেলাই করে জমানো ২০ হাজার টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছেন মিলন রবিদাস (৩৭)। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামের এই ব্যক্তি পেশায় একজন মুচি।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন ভূঁইয়ার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন দলিত সম্প্রদায়ের মিলন রবিদাস।

এতে বিস্ময় প্রকাশ করে ইউএনও মামুন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার কাছে এটা অবাক করার মতো ঘটনা। একজন মুচি সারাদিন জুতা রং করেন, সেলাই করেন। সেই ঘাম ঝরানো টাকা করোনার সময় অসহায় মানুষদের জন্য সরকারি তহবিলে দেয়াটা নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা।’

জানা গেছে, মিলন রবিদাসের নিজের থাকার মতো কোনো বসতভিটা নেই। চাচার (জ্যাঠা) জমিতে মা, স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে কোনো রকমে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার অভাব অনটনে ভরা সংসার চলে জুতা সেলাই করা সামান্য উপার্জনে।

মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ গেটের পাশে ছোট্ট একটা দোকান নিয়ে বসেছেন রবিদাস। সেখানে প্রতিদিন জুতা রং আর সেলাই করে যা আয় হয় তা দিয়েই তার সংসার ও ছেলে মেয়ের পড়ালেখা চলছে। কয়েক বছর আগে বৃদ্ধ মা-আর স্ত্রীর চাপে অনেক কষ্টে দুই শতক জমি কিনেছেন রবিদাস। কিন্তু অর্থাভাবে সেই জমিতে এখনো বাড়িঘর বানাতে পারেননি।

এ বিষয়ে মিলন রবিদাস বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করতে পারি নাই। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে গিয়েছি। বাবা মারা গেছেন ২০ বছর আগে। এরপর থেকে বাপদাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছি। সংসার চালানো যে কত কষ্টের তা প্রতিনিয়ত অনুভব করছি। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার ও সমাজের অনেক বিত্তবানরা ত্রাণ সহায়তা দিয়ে দুর্যোগে লড়াই করছেন। একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক যে অন্যের দানে চলে, সেও অসহায় মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তাই আমিও ঘর বানানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে জমানো টাকা সরকারের তহবিলে দিয়েছি।’

রবিদাস আরও বলেন, ‘নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই যদি মানুষের জন্য চিন্তা করে, তাহলে এই দুর্যোগ কেটে যাবে। ত্রাণের জন্য মানুষ কাঁদবে না। খাবারের জন্য রাস্তাঘাটে ঘুরবে না।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর