করোনাকালে স্কুল কলেজের বেতন মওকুফে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 16:32:11

করোনা পরিস্থিতির কারণে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। করোনা থেকে রক্ষা পেতে গত ২৬ মার্চ থেকে কার্যত পুরো দেশ লকডাউনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বন্ধ রয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে থেমে নেই বেতন ও উন্নয়ন ফি আদায়। বেতন মওকুফের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অভিভাবকগণ।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'স্কুল আমরা এখন খুলব না। স্কুল, কলেজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটাও খুলব না। সেটা আমরা কখন খুলব, অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল কলেজ সবই বন্ধ থাকবে। যদি করোনা ভাইরাস ততদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। যখন এটা থামবে তখনই খুলব। বেশি সমাগম যেন না হয়।'

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর অনেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত সেটাও প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া করোনা সংকটের কারণে প্রায় সকল শ্রেণির মানুষ আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, দীর্ঘসময় ধরে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও থেমে নেই তাদের সেশন ফি, মাসিক বেতন, উন্নয়ন ফি। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে বেতন পরিশোধ করার জন্য। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অগ্রিম বেতন চেয়েও এসএমএস করেছে।

প্রত্যেকটি বেসরকারি বিদ্যালয় বছরের শুরুতে ভর্তি বাবদ ছাত্র-ছাত্রী থেকে ২০-২৫ হাজার টাকা করে আদায় করে। যদি স্কুলে মোট ছাত্র-ছাত্রী ৩ হাজার হয়। তাহলে বছরের শুরুতে ওইসকল স্কুল ভর্তি ফি বাবদ আয় করে কোটি টাকার উপরে। এছাড়া কোন কোন স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সময় উন্নয়ন ফি বাবদ প্রতি জনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে কেটে নেয়। তাতেও প্রায় ৬০ লাখ টাকার আয় হয়। অথচ এই দুর্যোগকালীন সময়েও ওইসকল নামীদামি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বেতন আদায়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে। এনিয়ে অভিভাবকগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর নামীদামি স্কুলগুলো অগ্রিম বেতন চেয়ে অভিভাবকদের এসএমএস করেছে। অভিভাবকদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমার ছেলে একটি অভিজাত এলাকার প্রাইভেট স্কুলে পড়ে। সেখানে মাসিক বেতন ৪৬০০, পরিবহন খরচ মাসে ১৩০০। আমার কাছে এসএমএস করা হয়েছে দুই মাসের বেতনসহ ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে। আমি একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। করোনা সংকটের কারণে আমার বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া দেব নাকি সন্তানের স্কুলের বেতন পরিশোধ করবো। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ যদি স্কুল কলেজগুলোর কয়েক মাসের বেতন মওকুফ করেন তাহলে মানুষ বেঁচে যাবে।

প্রাক প্রাথমিক স্কুল 'জেনেসিস স্কুল' সরকারি নির্দেশনার সাথে সাথে ওই স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরইমধ্যে স্কুল থেকে এসএমএস করে জানানো হয়েছে এপ্রিল-মে পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন যেন বিকাশ করে পাঠানো হয়। অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস করে বলা হয়েছে। আপনারা জানেন আমাদের কিছু ফিক্সড ব্যয় আছে যেমন বাসা ভাড়া, স্টাফদের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ। এগুলো শিক্ষার্থীদের বেতন থেকেই দেওয়া হয়। তাই এপ্রিল-মে মাসের বেতন পরিশোধ করলে ভালো হয়।'

জেনেসিস স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী সিরাতুল জান্নাতের মা সাদিয়া আলাব্বী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, গত ৫ এপ্রিল আমাদের এসএমএস করা হয় এপ্রিল-মে মাসের বেতন দেওয়ার জন্য। এরইমধ্যে পরিশোধ করেছি। এখন যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এভাবে বন্ধ থাকে তাহলে বেতন দেব কিভাবে? তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমাদের মতো এরকম লাখ লাখ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে যদি স্কুল কলেজের বেতনের বিষয়ে কিছু বলতেন তাহলে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।

প্রাথমিকে দেশে প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬৬-৬৭ হাজার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো বেসরকারি। অন্যদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৬ হাজার স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যারমধ্যে মাত্র ৭০০ স্কুল কলেজ সরকারি এবং ৩৭টির মতো বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত বাকি সবই বেসরকারি। সারাদেশে এখন প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী। যাদের অধিকাংশই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর