১৮টি ভেন্টিলেটর প্রোটোটাইপ পেয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 22:54:13

এখন পর্যন্ত ১৮টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের ভেন্টিলেটর বানিয়ে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)-এ ভেন্টিলেটরগুলো জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান জুনাইদ আহমেদ পলক।

তিনি বলেন, ভেন্টিলেটরগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে, যাচাই-বাছাই হয়ে গেলে সেগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিতগুলোকে ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে জমা দেওয়া হবে।

ভেন্টিলেটার হলো এমন একটি যন্ত্র যা শ্বাসকষ্টের রোগীদের বিকল্প পন্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখা যায়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ফুসফুস অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক মতো কাজ করে না। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে অনেকে রোগী মারা যাচ্ছেন।

মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় দেশীয় প্রযুক্তি কোম্পানি ওয়ালটনের তৈরি করা ভিন্ন তিন মডেলের তিনটি ভেন্টিলেটরের প্রোটোটাইপ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কাছে হস্তান্তরের জন্য।

বুধবার ভেন্টিলেটরগুলো ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পলক।

তিনটি ভেন্টিলেটরের মধ্যে দুটি ওয়ালটনের নিজস্ব মডেল আর একটি করা হয়েছে বিশ্বখ্যাত মেডিকেল ডিভাইস কোম্পানি মেডট্রনিকের নকশা অনুসারে। ডব্লিউপিবি-৫৬০ মডেলের এই ভেন্টিলেটরটি তৈরি করতে মেডট্রনিকের প্রযুক্তিগত সহায়তাও পেয়েছে ওয়ালটন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ডব্লিউপিবি-৫৬০ মডেলের ভেন্টিলেটরটি খুবই আধুনিক। ভেন্টিলেটরটি মেডট্রনিকের নকশা অনুসারে করা হয়েছে। এছাড়াও তৈরির পুরো প্রক্রিয়ায় মেডট্রনিক এটি পর্যবেক্ষণ করেছে। কিছু যন্ত্রাংশ পেতেও তাদের সহায়তা নিতে হয়েছে।

গত ৩১ মার্চ একটি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মেডট্রনিক তাদের পিবি-৫৬০ মডেলের ভেন্টিলেটরের পেটেন্ট, ডিজাইন ও সোর্স কোড তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।

ওয়ালটনের এই ভেন্টিলেটরগুলো কোনো হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল টেস্টের জন্যে দেওয়া হবে বা কতদিন এর ক্লিনিক্যাল টেস্ট চলবে, তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ। তবে ওই ক্লিনিক্যাল টেস্টের ওপরেই নির্ভর করছে ভেন্টিলেটরগুলোতে কোনো পরিবির্তন-পরিমার্জন করতে হবে কিনা।

জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ক্লিনিক্যাল টেস্টিংয়ের পরেও আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা কোনো সংস্থার অনুমোদন লাগবে কিনা সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঠিক করবে।

ইতোমধ্যে ভেন্টিলেটরগুলোর উৎপাদনের জন্যে যন্ত্রাংশ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে সেসব যন্ত্রপাতি দেশে এসে পৌঁছাতে মে মাসের শেষ নাগাদ হয়ে যাবে বলে জানান ওয়ালটনের ভেন্টিলেটর প্রকল্প-প্রধান প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ।

প্রাথমিক পরিকল্পনা হিসেবে ডব্লিউপিবি-৫৬০ মডেলের কয়েকশ ভেন্টিলেটর তৈরি করা হতে পারে বলে জানান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।

তবে সবকিছু নির্ভর করছে মে মাসের পর দেশের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তার ওপরে, বলেন ওয়ালটনের ভেন্টিলেটর প্রকল্পের উপদেষ্টা প্রকৌশলী লিয়াকত আলী ভুঁইয়া।

এই প্রযুক্তি পণ্যটির মূল্য কতো হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি ওয়ালটন।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ব বাজারে এখন যে দামে ভেন্টিলেটর বিক্রি হচ্ছে অবশ্যই এগুলো তার চেয়ে অনেক কম দামের হবে, যদিও মানের দিক দিয়ে অনেক উচ্চ স্থানে থাকবে।

বর্তমানে চীন থেকে একটি ভেন্টিলেটর আমদানি করতে অন্তত সাত লাখ টাকা লাগে। ইউরোপ থেকে আনতে খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মেডট্রনিকের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ওমর ইশরাক বাংলাদেশের সন্তান, যিনি এখন প্রসেসর কোম্পানি ইন্টেলের প্রধান। মূলত তার কারণেই বাংলাদেশ মেডিট্রনিক্সের ভেন্টিলেটরের পেটেন্ট, ডিজাইন ও সোর্স কোড পেয়েছে বাংলাদেশ।

প্রথম দিকে ওয়ালটন ছাড়াও আরএফএল, মিনিস্টার ও আরো কয়েককটি কোম্পানি এই ভেন্টিলেটর তৈরির বিষয়ে আগ্রহী ছিল। তবে পরে শেষ পর্যন্ত ওয়ালটনই কাজ পেয়েছে। অন্যদিকে মিনিস্টারও তাদের মতো করে ভেন্টিলেটর তৈরি করেছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে মাত্র এক হাজারের মতো ভেন্টিলেটর আছে। আর অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে এখন ভেন্টিলেটার আমদানির কোনো সুযোগ নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর