সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটা পরিদর্শনে কৃষি ও পরিকল্পনামন্ত্রী

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 22:15:14

কৃষক ও শ্রমিকদের ধান কাটায় উৎসাহ দিতে এবং বোরো ধান কাটার অগ্রগতি দেখতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার হাওর পরিদর্শন করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বুধবার (২৯ এপ্রিল) ধান কাটা পরিদর্শনকালে কৃষকদের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে ১০০ কোটি টাকার হারভেস্টার ও রিপার মেশিন বিতরণ ও উদ্বোধন করেন মন্ত্রীদ্বয়।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ডুংরিয়ার হাওর পরিদর্শন শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ সময়টা বোরো ধান কাটার মৌসুম। আমাদের সারা বছরের মোট চাল উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি যোগান আসে বোরো ধান থেকে। সেজন্য শুধু হাওর নয়, সারা দেশের ফসল সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা জরুরি। এটি করতে পারলে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনার বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও হাওরের বোরো ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসে ধান কাটছেন। পাশাপাশি হাওরের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ধান কাটার যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে হাওরের কৃষক যাতে সহজে যন্ত্রপাতি কিনতে পারেন, সেজন্য যন্ত্রের দামের ৩০ শতাংশ দেন কৃষক এবং ৭০ শতাংশ দেয় সরকার। একই সাথে দেশের অন্য এলাকা থেকে হাওরের আগাম বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার মেশিন নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে ইতোমধ্যে হাওরের ৬৫ শতাংশ বোরো ধান কৃষকরা ঘরে তুলতে পেরেছেন। সুনামগঞ্জসহ অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে।

এসময় কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ভর্তুকি মূল্যের নতুন দু’টি হারভেস্টার মেশিন কৃষকদের কাছে হস্তান্তর করেন। এর মাধ্যমে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ১০০ কোটি টাকার ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি কার্যক্রমের উদ্বোধন করলেন দুই মন্ত্রী।

সারাদেশে ধান কাটা সহজতর করতে মোট ২০০ (আগের ১০০ ও প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ১০০) কোটি টাকায় প্রায় ১৩০০টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৯৩৪টি রিপার, ২২টি রাইস ট্রান্সপ্লানটারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে সম্প্রতি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী।

এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য এবং কৃষি খাতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। এ দু’টি খাত একে অপরের পরিপূরক। স্বাস্থ্য ও কৃষি ছাড়া বাঁচা যাবে না। সেজন্য আগামী বাজেটে কৃষি খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো হবে। যাতে করে কৃষিকে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।

পরে কৃষিমন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী কৃষকদের মাঝে সাবান, মাস্ক, গামছা ও লুঙ্গি বিতরণ করেন।

এসময় কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার সব সময় কৃষক ও শ্রমিকদের পাশে রয়েছে। কৃষি কাজের সময় বজ্রপাতে কেউ মারা গেলে, তার পরিবারকে নিজের ত্রাণ তহবিল থেকে এক লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কৃষকদের কাছে হারভেস্টার মেশিন হস্তান্তর করেন কৃষি ও পরিকল্পনামন্ত্রী, ছবি: বার্তা২৪.কম

এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুরক্ষার সাথে কৃষি কাজ চালিয়ে যেতে কৃষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানান মন্ত্রী। যাতে করে করোনা পরিস্থিতিতেও কৃষি উৎপাদন অব্যাহত থাকে। কেউ অসুস্থ বা করোনা আক্রান্ত হলে সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে বার বার কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছেন। কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

হাওর পরিদর্শনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংসদ সদস্য মুহিবর রহমান মানিক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শামিমা শাহরিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মাদ সফর উদ্দিনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর