কোরবানির গরুর দাম নিয়ে চলছে লুকোচুরি

রংপুর, জাতীয়

ডিস্টিক করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-30 12:09:51

রংপুর: ঈদের বাকি আরও এগারো দিন। এরই মধ্যে রংপুর বিভাগের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের যাওয়া আসা শুরু হয়েছে। হাটে দেশি গরুর চাহিদা থাকলেও দিন দিন শঙ্কা বাড়ছে ভারতীয় গরুর আমদানি নিয়ে। তবে এবার চাহিদার চেয়ে রংপুর বিভাগে আড়াই লাখেরও বেশি পশু উদ্বৃত্ত হওয়ায় হাটগুলোতে কদর বেড়েছে দেশি গরুর পাশাপাশি ছাগল কেনাবেচায়।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিস জানান, এই বিভাগের আট জেলায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ২১ জন খামারি সাড়ে ৪ লাখেরও বেশি গরু বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে। এছাড়া ২ লাখের উপর বাসা-বাড়িতে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রায় ৯ লাখ পশু রয়েছে। এর মধ্যে ছাগল ও ভেড়া রয়েছে প্রায় ৩ লাখ। এর মধ্যে শুধু রংপুর জেলার ৩৩ হাজার খামারে রয়েছে ২ লাখেরও বেশি গরু। এবার রংপুর বিভাগে ১৪ লাখ কোরবানির পশু মজুদ থাকলেও চাহিদা রয়েছে সাড়ে এগারো লাখ পশুর। উদ্বৃত্ত প্রায় আড়াই লাখের বেশি কোরবানির পশু ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠানো হবে।

এদিকে চাহিদার চেয়ে বেশি গরু থাকায় ভারতীয় গরুর উপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশি গরুতেই লাভের আশায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন রংপুর অঞ্চলের হাটবাজারে গরু নিয়ে আসা খামারিরা। কোরবানিতে দেশি ও শংকর জাতের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় খামারিরা এ ধরনের গরু স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে মোটাতাজাকরণ শুরু করেছে এক বছর ধরে। এরই মধ্যে রংপুর অঞ্চলের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও খামারি এবং ব্যাপারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু অনুযায়ী দরদাম করে কিনতে শুরু করেছে।

রংপুর নগরীর খাসবাগ এলাকার খামারি শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ৬০টি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ওই গরুগুলো বিক্রি করলে তাকে অনেক লোকসান গুনতে হবে। তাই এখনো গরু বিক্রি করেননি। তবে ভারতীয় গরু বাজারে না উঠলে দেশি গরুর দাম বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।

এদিকে রংপুরের বেতগাড়িহাট, লালবাগহাট, নিসবেতগঞ্জহাট, পাওটানাহাট, দেউতিহাট, চৌধুরানীহাট, বালারহাট, জায়গীরহাট, শঠিবাড়িহাট, খালাশপীরহাট, বুড়িরহাট, চতারহাট, খানসামাহাট, টেপামধুপুরহাট, অনন্দানগরহাটসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ছোট-বড় হাটগুলোতে গরু-ছাগলের কেনাবেচা শুরু হলেও এখনো জমে ওঠেনি ঈদ আমেজ। হাটে ক্রেতাদের তেমন ভিড় নেই বললেই চলে। তবে ঈদের পাঁচ ছয়দিন আগে থেকেই বিভাগের বড় বড় হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাবে বলে দাবি হাট ইজারাদার ও গরু বিক্রেতাদের।

শুক্রবার রংপুর মহানগরীর নিসবেতগঞ্জহাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটে আসা ক্রেতারা ছোট ও মাঝারি আকৃতির দেশি গরু ও ছাগলের দিকেই ছুটছে। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় এবং দেশীয় খাদ্যে লালন-পালন হওয়ায় ওইসব গরুর প্রতি ঝুঁকছে তারা। পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের গরু ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছে রংপুর বিভাগের হাটগুলোতে।

তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিক্রেতাদের। ক্রেতারা আসছে, পছন্দ করছে তবে কিনছে কম। পাইকারি গরুর ব্যবসায়ীরাই মূলত গরু কিনছে বেশি।

বর্তমানে প্রকারভেদে হাটে দেশি গরু ৩৫ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, এখন যে দাম যাচ্ছে তাতে লাভের মুখ দেখছে না। সব মিলিয়ে পশুর দাম কম বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে।

বুড়িরহাটে গরু কিনতে আসা রংপুর নগরীর ইসলামবাগের বাসিন্দা এস.এম মোহসীন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি। গত দুই হাট ঘুরেও আমার সামর্থ্যের মধ্যে গরু কিনতে পারিনি। অথচ এর চেয়ে কম দামে গত বছর গরু কিনেছি।’

এই হাটের ইজারাদার বাবুল মিয়া জানান, হাটে দেশি ছোট ও মাঝারি গরু বেশি কেনাবেচা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হাটে ভারতীয় গরু ওঠেনি। ঈদের আগের ২ হাটে বেশি দেশি গরু বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি।

এদিকে বাজারে গরুর দাম কম থাকার বিষয়টিকে সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-পরিচালক ড. শেখ আজিজুর রহমান। তিনি জানান, চাষিদের কাছ থেকে কম দামে গরু হাতিয়ে নেয়ার জন্য হাটের দালাল ও ব্যবসায়ীরাই মূলত এসব বিভ্রান্তি ছড়ায়। বস্তুত খামারিরা ঠিকই দাম পাচ্ছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে গরুর দামও তত বাড়বে।

তিনি জানান, ক্ষতিকারক ইনজেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে যাতে কোনো খামারি গরু মোটাতাজা করতে না পারে সে জন্য মাঠ কর্মীরা দিনরাত কাজ করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর