বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গুর ঝুঁকি

, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 00:56:36

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে নতুন আতঙ্ক শুরু হয়েছে ডেঙ্গু। চলতি সপ্তাহে কয়েকদিনের বৃষ্টি রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রজনন ক্ষেত্র তৈরিতে ভূমিকা রাখছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষ সাধারণ ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। তাই বাসাবাড়িসহ দোকানপাট, বাজারঘাট, বাস টার্মিনালসহ বহু জায়গায় মানুষের সমাগম না থাকায় পরিত্যাক্ত টায়ার, পানির পাত্র, ডাবের খোসা, ফুলের টবসহ বিভিন্ন বস্তু ও স্থানে পানি জমে যাচ্ছে।

মানুষের সমাগম না থাকায় জমে থাকা স্বচ্ছপানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার ঘটছে। বিশেষজ্ঞদের মতে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া ডেঙ্গুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এখন করোনা রোগী নিয়ে ব্যস্ত। তাই সাধারণ জ্বর বা অন্য কোন উপসর্গ থাকলেও অনেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন না। ফলে অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও শনাক্ত হচ্ছে না।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দাবি করছে তারা নিয়মিত ফগিং ও লার্ভিসাইডিং করে যাচ্ছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক এলাকায় সিটি করপোরেশনের মশক নিধনকর্মীরা পৌঁছাতে পারছেন না। বিশেষ করে যেসব এলাকা লকডাউন করা হয়েছে সেখানে মশানিধন কর্মীরা প্রবেশ করতে পারছেন না।

বিশেষজ্ঞদের মতে এখন থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে না পারলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে রাজধানীবাসীসহ পুরো দেশবাসীকে। সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে মশার বংশবিস্তার বাড়তে থাকে। এই প্রকোপ চরম পর্যায়ে পৌঁছায় জুলাই-আগস্ট মাসে। তাই সংশ্লিষ্টদের দাবি এখনই উৎসে মশা দমনের উপযুক্ত সময়। যে করেই হোক মশা যেন বংশবিস্তার না করতে পারে সে জন্য উৎসে দমন করতে হবে।

এছাড়া মশার ওষুধ ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা আগেই পরীক্ষা করে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় চলে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে এখনই প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা এলাকায় স্প্রে মেশিন সরবরাহ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বার্তা২৪.কমকে বলেন, বৃষ্টিপাত যেভাবে শুরু হয়েছে সঙ্গে রোদ— এটা মশা জন্মানোর উপযুক্ত পরিবেশ। এপ্রিল মাস থেকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে না পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই এখনই মশার জন্মস্থল ধ্বংস করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধিদের অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কিভাবে এডিশ মশা ধ্বংস করা হয়, সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে কাজ করতে সহজ হবে।

অধ্যাপক কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় দেখা গেছে চলতি বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৯৯ জন, যা একই সময়ে ২০১৯ সালে ছিল মাত্র ৩৮ জন। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৪৫ জন, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১৮ জন। মার্চ মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৭ জন, ২০১৯ সালের মার্চে যা ছিল ১৭ জন। তবে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ডেঙ্গু রোগী ছিল ৫৮ জন। কিন্তু এবার এপ্রিলে হঠাৎ করে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।

জানুয়ারিতে বাড়লেও এপ্রিলে নিম্নমুখী হওয়ার কারণ ব্যাখা করে কবিরুল বাশার বলেন, মানুষ এখন ভয়ে পরীক্ষা করাচ্ছে না। সবাই করোনা নিয়ে চিন্তিত তাই বিষয়টি চোখে পড়ছে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি বছরের শুরু থেকেই আছে। আমরা নিয়মিত স্প্রে ও লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম করছি। তবে করোনায় লকডাউন থাকার কারণে অনেক জায়গায় আমাদের কর্মীরা যেতে পারছেন না। করোনার কারণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা একটি সার্ভে করেছি সেখানে দেখা গেছে, এডিশ মশার ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ধরা হয় ঘনত্ব ২০ এর উপরে হলে সিগনিফিক্যান্ট। আশার কথা হলো আমাদের একটি ওয়ার্ডেও ওই পর্যায়ে পৌঁছায়নি। শুধু ৫টি ওয়ার্ডে ঘনত্ব ১০ এর কাছাকাছি ছিল। তারপরও আমরা বসে নেই, নিয়মিত কাজ করছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর