রংপুর জেলায় ছোট-বড় মিলে দুগ্ধ খামারের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এসব খামারে গড়ে প্রতিদিন উৎপাদন হয় ১ লাখ ২৫ হাজার লিটার দুধ। উৎপাদিত দুধের ষাট শতাংশ বিক্রি হয় বাসা-বাড়ি, হোটেল আর মিষ্টির দোকানে। বাকি চল্লিশ শতাংশ কিনে নেয় বিভিন্ন দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন এখানকার দুগ্ধ খামারিরা।
চলমান সাধারণ ছুটিতে রংপুর জেলার দুগ্ধ খামারিদের প্রতিদিন ক্ষতি গুনতে হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। আর গেল এক মাসে এই লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে। এতে দুগ্ধ খামারের উপর নির্ভরশীল প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত প্রণোদনায় তাদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। এখন খামার টিকিয়ে রাখতে জরুরি অনুদান চাইছেন তারা।
রংপুর নগরীর রবার্টসনগঞ্জ তাঁতীপাড়া এলাকার এসআর দুগ্ধ খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার কারণে এখন কোম্পানিগুলো পরিবহন ব্যবস্থা সীমিত করেছে। খামারিদের কাছ থেকে আগের মতো দুধ কিনছেন না। যা নিচ্ছে তাও পরিমাণে অনেক কম। আর শহরের চা-মিষ্টির দোকানসহ হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় এখন উৎপাদিত দুধ কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, নগরীর নূরপুর মহাদেবপুর ও গুপ্তপাড়া এলাকার খামারিরা জানান, বর্তমানে প্রতি লিটার দুধ উৎপাদনে তাদের খরচ হচ্ছে চল্লিশ টাকা। কিন্তু বিক্রির বেলায় এর চেয়ে কম দামে ছাড়তে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, গরুর খাবার যোগান দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে গরুকে ঠিক মতো খাওয়াতে না পারলে আগামীতে চাহিদা অনুযায়ী দুধ উৎপাদন সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন খামারিরা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দিন দিন লোকসানের অংক মোটা দাগে পৌঁছায় খামার নিয়ে চিন্তিত দুগ্ধ খামারি ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি খামার টিকিয়ে রাখতে এখন প্রয়োজন জরুরি অনুদান।
এ ব্যাপারে রংপুর ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এসএম আসিফুল ইসলাম বলেন, ‘রংপুরে প্রতিদিন প্রায় সোয়া লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি লিটার দুধ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে চল্লিশ টাকারও বেশি। কিন্তু উৎপাদিত দুধ ঠিক মতো বিক্রি হচ্ছে। লকডাউনের কারণে হোটেল আর মিষ্টির দোকানসহ দুধ সরবরাহকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিদিন অবিক্রীত থেকে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ দুধ। বাধ্য হয়ে অনেকেই ত্রিশ টাকা লিটারে দুধ বিক্রি করছেন।’
রংপুর ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিটি খামার ঘাটতিতে আছে। প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে গেল এক মাসে তিন কোটির টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুগ্ধ খামারে উৎপাদন ধরে রাখতে ও ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে এখন প্রণোদনার অর্থ দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় এই দুর্যোগে খামার টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকসান কমাতে দানাদার খাবারের নির্ভরতা কমিয়ে গরুকে সবুজ ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন রংপুর জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদফতরের শাহাজালাল খন্দকার।
বার্তা২৪.কম-কে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি কারো অনুকূলে নেই। যান চলাচল থেকে মানুষের চলা ফেরা বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থায় খামারিদের উৎপাদিত দুধ বিক্রিতেও বিঘ্নতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে লোকসান কমাতে খামারিদের দানা খাবারের নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। বর্তমানে সবুজ ঘাসের মৌসুম চলছে তাই দানাদার খাবারের পরিবর্তে সবুজ ঘাস খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলেও খামারিদের খরচ অনেক কমে আসবে।’