ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন

, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-23 19:42:37

রংপুরের তারাগঞ্জে বৈধ-অবৈধ মিলে অর্ধশত ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাটার বেশির ভাগই অনুমোদনহীন। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে যত্রতত্র গড়ে উঠা ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে বাতাস। হুমকিতে রয়েছে বনায়ন, অভয়ারণ্য, বাগান ও জলাভূমি। ইতোমধ্যে ভাটার চুল্লি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় বেশ কিছু বোরো ধানের খেত পুড়ে নষ্ট হয়েছে।

স্বপ্নমাখা ধানের এমন ক্ষতিতে দিশেহারা কৃষকরা। ফসলি জমি রক্ষাসহ স্বাভাবিক উৎপাদন ধরে রাখতে পরিবেশবান্ধবহীন ইটভাটাগুলো বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগও করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের খিয়ারজুম্মা ও বাঙালীপুর এলাকার জমি নিচু হওয়ার কারণে বোরোধানের বাম্পার ফলন হয়। ওই এলাকার অনেক কৃষক জমির মালিকের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেছেন। চলতি বোরো মৌসুমে আর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে চাষিরা ধান কেটে ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। কৃষকদের সেই স্বপ্ন আগুন দিয়েছে এলবিএল ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। সেখানকার অর্ধশতাধিক কৃষকের প্রায় একশ’ একর বোরো ধান খেত পুড়ে গেছে।

দোয়ালিপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪২) বলেন, ‘বাহে মোর ১৫ শতক জমির ধান ইটভাটার গ্যাসোতে পুড়ি গেইছে। ভাটার মালিক ১৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিছে। এই টাকা দিয়্যা কি মোর পরিশ্রম, মোর স্বপ্ন পূরণ হইবে। এমন করি খেতের ফসল নষ্ট হইলে হামরা কি করি খামো।’

একই গ্রামের ডাঙ্গীরদোলার একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, আইন অমান্য করে তারাগঞ্জে ৪৮টিরও বেশি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসবের মধ্যে ১৫টির বৈধ কাগজ থাকলেও বাকি ইটভাটাগুলো চলছে অবৈধ কাগজপত্রে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার প্রভাবে বেশির ভাগ ইটভাটা মালিকরা ইট উৎপাদন করছেন। এতে করে ভাটার চুল্লি থেকে নির্গত কালো বিষাক্ত ধোঁয়া আর গ্যাসে কৃষি জমির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

অর্ধশতাধিক কৃষকের প্রায় একশ’ একর বোরো ধান খেত পুড়ে গেছে
অর্ধশতাধিক কৃষকের প্রায় একশ’ একর বোরো ধান খেত পুড়ে গেছে

এ ব্যাপারে এলবিএল ইটভাটার মালিক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, শুধু আমার ইটভাটার কারণে ক্ষতি হয়নি। এলাকায় বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। কৃষকদের যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে আমি অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পর্যায়ক্রমে দেব। তবে অন্য ইটভাটার মালিকদের সাথেও বসা উচিত, তাহলেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।

এদিকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আলমপুর ইউনিয়নের খিয়ারজুম্মা, দোয়ালীপাড়া, বাঙালীপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় অর্ধশত কৃষক তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন।

আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদের চৌধুরী বলেন, গরিব কৃষকদের প্রায় একশ একর জমির ধান পুড়ে গেছে। আমার কাছে তারা অভিযোগ করেছে। আমি বিষয়টি নিয়ে ইটভাটার মালিকের সাথে কথা বলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করব।

অন্যদিকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অশোক কুমার রায় জানান, ফসলি জমির পাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা অনুমোদন দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। ভাটা মালিকরা ক্ষমতার প্রভাবে যত্রতত্র ভাটা স্থাপন করায় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।  

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কৃষকের ক্ষতি হলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর