করোনাভাইরাসের প্রকোপে সিটি কর্পোরেশন আওতাভুক্ত এলাকার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়লেও সচেতন হয়নি মানুষ। নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরের সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌকা ও ট্রলার ঘাট বন্ধ রাখা হলেও ৪ নং আমঘাট থেকে বিকল্প ভাবে চলছে যাত্রী পারাপার। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে সকল সেক্টরকে সামাজিক দূরত্ব মানার নির্দেশ দেয়া হলেও সেসবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাদাগাদি করে যাত্রী পারাপার চলছে নৌকাগুলোতে।
নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বন্দরে যাওয়ার জন্য দুইটি গুরুত্বপূর্ণ নৌকা ঘাট হচ্ছে সেন্ট্রাল খেয়া ঘাট এবং ৫ নং খেয়া ঘাট। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবং লকডাউন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এ দুটি ঘাট। কিন্তু জরুরি সেবার নাম করে বিআইডব্লিউটিএ-এর অফিসের পাশে অস্থায়ী ঘাট তৈরি করে ক্রমশই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে বন্দর ও শহরবাসীদের।
সোমবার সরজমিনে ৪ নং অস্থায়ী ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ঘাটের আশেপাশে মানুষের জমজমাট উপস্থিতি। নদীতে প্রায় ২৫টি নৌকা যাত্রীদের পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। একেকটি ১৫ ফিট দৈর্ঘ্যের নৌকায় মাঝিসহ ২০/২২ জন যাত্রী উঠে যাচ্ছেন। ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫ টাকা করে। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় দূরত্ব বজায় রেখে ৫/৬ জন যাত্রী নেয়া এবং ১০ টাকা করে ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও সেসব মানতে নারাজ মাঝিরা। অধিক লাভের আশায় একেকটি নৌকায় ২০ থেকে ২২ জন তুলে ৫ টাকা ভাড়া আদায় করে প্রতিবার পেয়ে যাচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। কেউ কেউ এত ভিড়ে যেতে দ্বিধাবোধ করলেও উপায়ন্তর না দেখে উঠে যাচ্ছেন নৌকায়। আবার অনেকে একটু বেশী টাকা দিয়ে নৌকা রিজার্ভ করে নদী পার হচ্ছেন। তবে এদের সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য।
শুধু নদী পারাপারেই এমন অসচেতনতার দৃশ্য নয়! লঞ্চঘাটের সামনে থেকে ৪ নং আমঘাট পর্যন্ত দীর্ঘ রিকশা জটের চিত্র লক্ষ্য করা যায়। দুই পাড় থেকে পারাপার হওয়া যাত্রীদের অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইন দিয়েছেন এ সকল রিকশা চালকরা। এছাড়া যাত্রীদের চলাচলের দুপাশে বসেছে হকার। জামা কাপড় থেকে শুরু করে ইফতার সামগ্রী এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুতকৃত মাঠা বিক্রি হচ্ছে খোলা পরিবেশেই। এ যেন করোনা সংক্রমণের এক উপকেন্দ্র। মানুষের অসচেতনতা এভাবে চলতে থাকলে ভয়াবহ রূপ নিবে করোনাভাইরাস তা এক নজর দেখলেই বোধগম্য হবে সকলের। করোনার সংক্রমণের এমন ভয়াবহ চিত্র সকলের সামনে বার বার এলেও পুরো এলাকা জুড়ে নেই কোন পুলিশি তৎপরতা। মাত্র ২০০ গজ দূরে অবস্থিত সেন্ট্রাল ঘাটে পুলিশি পাহারা এবং নৌ পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়নে কাজ করতে দেখা যায়নি।
বন্দর থেকে শহরে বাজার করতে আসা এক বাসিন্দা জানান, কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে শহরে এসেছিলাম। এখন আবার চলে যাচ্ছি। নৌকায় ভিড় হলে তো আমাদের করণীয় কিছু নেই। সবাই যাচ্ছে আমিও তাই এভাবেই যাচ্ছি। কপালে করোনা রোগ থাকলে তো আটকে রাখা সম্ভব না।
মাত্র ১৫ ফিট দৈর্ঘ্যের নৌকায় এত মানুষ কেন নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্ন মাঝিদের করা হলে তারা সুকৌশলে যাত্রীর উপর দায় চাপিয়ে দেন। অনেকে সংবাদকর্মী বুঝতে পেরে কথা বলতেও চান না। তবে সচেতন যাত্রীদের মতে অধিক লাভের জন্যেই বেশী যাত্রী তুলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে মাঝিরা। এতে করে মাঝির যেমন আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল তেমনি তার দ্বারা বাকিরাও আক্রান্ত হবেন।
এ ব্যাপারে নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুল হাকিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রতিদিন সেখানে গিয়ে মাইকিং করি, মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু চলে আসার পরেই তারা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। জেলা পুলিশ যদি সেখানে টহল টিম বসায় তাহলেই সেখানে একটি টিম দেয়া সম্ভব। আমরা উপরের নির্দেশ ছাড়া সেখানে সার্বক্ষণিক টিম দেয়ার ক্ষমতা রাখি না। তবে মানুষের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিং অব্যাহত রাখি।