চিকিৎসক সংকটে পীরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নষ্ট হচ্ছে সরঞ্জামাদি

, জাতীয়

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, উপজেলা করেসপন্ডন্ট, বার্তা২৪.কম, পীরগাছা (রংপুর) | 2023-09-01 00:25:24

রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যাতে উন্নীত হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত ৩১ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। তবুও চিকিৎসকের সবকটি পদই এখনো শূন্য। বর্তমানে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে চলছে সেবা কার্যক্রম। জনবল সংকটে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সরঞ্জামাদি। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকসহ জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বুধবার (৬ মে) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগের ৩১ শয্যা বিশিষ্ট জনবল কাঠামো অনুযায়ী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ নয় জন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদের মধ্যে ছয়টি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য ছিল। দুজন চিকিৎসককে গত ফেব্রুয়ারি মাসে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক শূন্যতা দেখা দেয়।

গত বছরের ৮ ডিসেম্বর যোগদানকৃত ১০ জন চিকিৎসক (৩৯ তম বিসিএস) পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে ওই চিকিৎসকদের স্থানীয় আদেশে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদায়ন করে।

এদিকে, জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও রংপুর বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয় থেকে বিভিন্ন অফিস আদেশের মাধ্যমে আরও তিনজন চিকিৎসককে অন্যত্র পাঠানো হয়। রংপুরের অন্যান্য উপজেলায় অতিরিক্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা পদায়িত থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে পীরগাছা থেকে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকদের সংযুক্তিতে অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করোনা সংকটের মধ্যে ফের স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে নানা সংকটের মধ্যেও নতুন চিকিৎসকদের যোগদানের খবরে অনেকটা স্বস্তি ফিরে আসে উপজেলাজুড়ে। কিন্তু নতুন চিকিৎসকদের যোগদানের কয়েক মাস পর আবারও চিকিৎসক সংকটে তাদের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ২০ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও ১৯টি পদেই চিকিৎসক নেই। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু আল হাজ্জাজ প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন। আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার পদটি দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য। তবে বর্তমানে ডা. সানোয়ার হোসেন ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে শূন্য রয়েছে। জুনিয়র মেকানিক পদও দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে শূন্য। এছাড়া প্রধান অফিস সহকারীসহ দুইজন অফিস সহকারী, একজন নৈশ প্রহরী, দুই জন ওয়ার্ড বয়, ঝাড়ুদার ও মালী পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

৫০ শয্যার জন্য সরবরাহ করা ডিজিটাল সরঞ্জামাদিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনসহ বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ব্যবহার না করায় অকেজো হয়ে পড়েছে।

২০০৭ সালে এক্স-রে মেশিনের ভাল্বসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অকেজো হয়। তখন থেকে এটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাক্স বন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। ৭ বছর পর নতুন ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন দেওয়া হলেও অপারেটর না থাকায় চালু করা সম্ভব হয়নি। শুধু এক্স-রে মেশিন দুটি নয়, দীর্ঘদিন ধরে রক্ত সংরক্ষণের রেফ্রিজারেটর, ডিসটিল ওয়াটার তৈরির মেশিন চালু করা যায়নি। তবে সীমিতভাবে প্যাথলজি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ইসিজি বন্ধ রয়েছে। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

উপজেলার কান্দি এলাকার বাসিন্দা আব্দুস ছালাম বলেন, ‘নতুন চিকিৎসক যোগদানের খবর শুনে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু আবারও সংকটের কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। চলমান করোনা সংকটে চিকিৎসা সেবার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একমাত্র ভরসা। তাই দ্রুত চিকিৎসক সংকট দূর করা উচিত।’

পীরগাছা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়ে আসতে হয়। এতে তাদের অর্থ ও সময় দুটোই অপচয় হচ্ছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সানোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সপ্তাহে তিনদিন সীমিতভাবে প্যাথলজি পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে জনবল সংকটের কারণে ইসিজি সব সময় করা সম্ভব হয় না। আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট তীব্র। আর এই সমস্যাটি দীর্ঘদিন থেকেই চলছে। যারা আছেন তারাও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বারবার জানানো হয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু আল হাজ্জাজ মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চলছে। তবে তাদের পাশাপাশি একজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও ডেন্টাল সার্জন দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবহৃত না হওয়ায় এক্স-রে মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। জনবল সংকটে মূল্যবান সরঞ্জামাদিগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত চিকিৎসক সংকটের সমাধান করা হবে। তবে চিকিৎসক ছাড়া বেশীর ভাগ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় জনবলের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর