নামমাত্র লটারি, নিরুপায় কৃষকের ধান কিনছে মধ্যস্বত্বভোগী

, জাতীয়

জাহিদ হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর | 2023-09-01 10:50:07

যশোরের আট উপজেলায় কৃষক থেকে ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৫শ’ ৬৬ মেট্রিক টন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দশ দিন পার হলেও এখনও পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ১ শতাংশও ধান ক্রয় করা হয়নি। নিরুপায় হয়ে কৃষক তাদের ধান মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছেই বিক্রি করছে। কৃষক দাবি করছে, নামমাত্র লটারি করা হয়েছ, শেষমেশ ধান মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এমনকি সরকারি ধান ক্রয়ের কোনো প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অনেক কৃষকও জানেন না এই লটারির বিষয়ে।

জেলায় সরকারের বেঁধে দেওয়া ধানের মূল্যে মণপ্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা হলেও জেলা খাদ্যবিভাগ দ্রুত ধান না কেনার কারণে কৃষকরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রয় করছে মনপ্রতি ৮৫০ থেকে ৯ শ’ টাকা দরে। সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করতে না পেরে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছেন সেই মধ্যস্বত্বভোগীরাই।

এ নিয়ে কৃষক ও খাদ্য বিভাগের বক্তব্য বিপরীত। কৃষকের গোলায় ধান উঠলেও সরকারি খাদ্য গুদামগুলো ধান ক্রয় করছে না। দ্রুত ধান ক্রয় না করার ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। খাদ্য বিভাগ বলছে, কৃষকের ধান কাটা ও মাড়াই শেষ না হওয়ার তারা সংগ্রহ করতে পারছেন না।

বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা গ্রামের কৃষক জয়নাল হোসেন বার্তা ২৪.কমকে জানান, খাজুরা বাজারে সপ্তাহে দুদিন বসে ধানের বাজার। বাজারের পাশেই সরকারি খাদ্য বিভাগের খাদ্য গুদাম। এখানেই সরকারিভাবে এক হাজার ৪০ টাকা দরে সংগ্রহের কথা ছিলো বোরো ধান। খাজুরার বাজারে ধান বেচাকেনা হলেও কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কোনো তোড়জোড় নেই খাদ্য বিভাগের। অথচ এ গুদামে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ হাজার ৬০ মেট্রিক টন। বাজারের কাছে সরকারি গুদাম হলেও তারা ধান বিক্রি করতে পারছেন না।

মণিরামপুর উপজেলায় নাম না প্রকাশে ইচ্ছুক সরকারি নিবন্ধিত এক রাইস মিলার বলেন, প্রতিবছরই ধান ও চাল কেনার ব্যস্ততার কথা বললেও এবার তেমন দেখছি না। আমাদের উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নামমাত্র কৃষকদের লটারি হয়েছে। কিন্তু এখনো ধান ক্রয়ের কোনো কার্যক্রম দেখছি না। সরকারি ধান ক্রয়ের কোনো প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অনেক কৃষকও জানেন না এই লটারির বিষয়ে।

তিনি আরো বলেন, কৃষকরা ধান বিক্রি করে সার ও সেচের টাকা পরিশোধ করবে। কিন্তু খাদ্যবিভাগ দ্রুত ধান না ক্রয়ের ফলে ধার দেনা পরিশোধ করার জন্য কৃষকরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে মণ প্রতি ৮৫০ টাকা দরে ধান বিক্রি করছে।

এ নিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী ৭ মে থেকে ধান কেনা শুরু হলেও যশোরে এখনো সেই পরিমাণ ধান-চাল ক্রয় হয়নি। বলতে গেলে ১ শতাংশ ধানও ক্রয় করা হয়নি।

নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত ১ শতাংশ ধান কেনা হয়নি কেন, এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াই শেষ না করার কারণে তারা ধান ক্রয় করতে পারছে না।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস মতে, যশোরের আট উপজেলায় গত আমন মৌসুমে সরকার কৃষকের নিকট থেকে কেজি প্রতি ২৩ টাকা দরে ধান কিনলেও চলতি বোরো মৌসুমে কিনছে ২৬ টাকা দরে এবং চাল কিনছে ৩৬ টাকা দরে। যশোরের আট উপজেলায় কৃষকের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ হাজার ৫শ’ ৬৬ মেট্রিক টন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর