পাইকার সংকটে ব্যাপক ক্ষতির মুখে কৃষকরা

, জাতীয়

জাহিদ হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর | 2023-08-31 09:16:43

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ধস নেমেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি বাজার যশোরের সাতমাইল ও চুড়ামনকাটিতে। আগের তুলনায় সবজির আমদানি ও বিক্রি দুটোই কমেছে।

গণপরিবহন সংকটের কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা সবজির বাজারে আসছেন না। এতে বাজারে সবজি বিক্রি করতে গিয়ে উৎপাদন খরচও উঠাতে পারছেন না কৃষকরা। তাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

কৃষকরা জানান, শীত মৌসুমে সবজি বিক্রি করে তারা কিছুটা লাভের মুখ দেখলেও এখন উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। তাই পাইকার সংকটে সবজি বিক্রি করতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যশোর অঞ্চলে দেশের ৬০ ভাগ সবজি উৎপাদন করা হয়। বছরে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন সবজি সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। এর ভেতরে ২ লাখ মেট্রিক টন শীতকালীন সবজি যশোরের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। রমজান মাসে ভালো দামের আশায় আগাম গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদ করেছিলেন কৃষকরা।

সবজি বিক্রি করতে পাইকারদের জন্য অপেক্ষা করছে কৃষকরা।

যশোর জেলায় এবার চলতি মৌসুমে ১৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলে বছরে দুইবার সবজি আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে যশোর সদরে ২ হাজার ৩১৫ হেক্টর, শার্শায় ১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, ঝিকরগাছায় ২ হাজার ১০ হেক্টর, চৌগাছায় ৪ হাজার ২৫০ হেক্টর, কেশবপুরে ১ হাজার ১০ হেক্টর, মণিরামপুরে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর, অভয়নগরে ৫৫০ হেক্টর ও বাঘারপাড়ায় ৮৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়।

জেলার বড় পাইকারি বাজার সাতমাইল ও চুড়ামনকাটিতে চলতি মৌসুমে পটল, বেগুন, শিম, টমেটো, লাউ, পেঁপেসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রি করছেন কৃষকরা। তবে করোনার কারণে এবারের চিত্রটা ভিন্ন। পাইকাররা না আসায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে সবজি। এতে আর্থিকভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

মঙ্গলবার (১৯ মে) দুপুরে সাতমাইল ও চুড়ামনকাটি বাজারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাক-সবজি উৎপাদনে হেক্টর প্রতি গড় ফলন সর্বোচ্চ ও সবজির চাহিদা পূরণে বিশেষ অবদান রাখায় সারাদেশের মধ্যে জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে যশোর। সম্প্রতি ঢাকায় জাতীয় কৃষি মেলা শেষে এই স্বীকৃতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।  কিন্তু এবার চলতি মৌসুমে করোনার কারণে পাইকার সংকটে সবজি বিক্রি করতে না পেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা।

চুড়ামনকাটি বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আহাদ আলী জানান, মঙ্গলবার হাটে ১০ টাকা কেজি দরে পটল, ২৫ টাকা কেজি দরে বেগুন, ২৫ টাকা কেজি দরে টমেটো, কলার হালি ১০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৮ টাকা, বরবটির কেজি ১২ টাকা, শসার কেজি ১৫ টাকা, পুঁইশাকের আঁটি ৫ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫-৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

চুড়ামনকাটির বিজয়নগরের কৃষক আহাদ বলেন, ‘এবার ৩ বিঘা জমিতে পটল লাগিয়েছি। বাজারে পটল ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমার উৎপাদন খরচ উঠবে না। মূলত পাইকার না আসার কারণে আমরা সবজির দাম পাচ্ছি না।’

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আক্তারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে জানান, যশোরে সারা বছর সবজির আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু এখন করোনা ভাইরাসের কারণে সবজির দাম কম পাচ্ছেন কৃষকরা।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর