ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে-পরে যা করবেন

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 11:16:21

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৬১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। ৪ ক্যাটাগরির এই ঘূর্ণিঝড় কিছুটা দুর্বল হয়ে ৩ ক্যাটাগরিতে নেমে এসেছে। ফলে কমেছে এর গতি। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হচ্ছে। তবে এখনও ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। একই সঙ্গে বাতাসও বয়ে যাচ্ছে। এর প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী বুধবার (২০ মে) বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবন হয়ে খুলনা অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় আম্পান।

মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে সাত নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বন্দর থেকে লঞ্চ ও জাহাজ চলাচল। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে আকস্মিক এমন বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ। তাই ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি ও সচেতনতা। কীভাবে মোকাবিলা করবেন, কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং কী করলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এসব বিষয় বার্তা২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগের প্রস্তুতি

ঘরের সব দরজা-জানালার লক ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে। প্রয়োজনে লক ঠিক করতে হবে অথবা নতুন লক লাগিয়ে নিতে হবে।

পানিসহ শুকনো খাবার সংগ্রহে রাখতে হবে

ঘরের কোথাও কোনো ধরনের ফাটল বা চিড় আছে কিনা দেখতে হবে, এবং টিনের ছাদ হলে ছাদে উঠে দেখতে হবে ছাদের অংশে কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা। যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তবে দ্রুত মেরামত করতে হবে। নতুবা ঝড়ে বাড়ির দুর্বল অংশের কারণে ঘরের উপরে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এ সময় সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে। তাই ঘরে হারিকেন, কেরোসিন তেল ও মোমবাতি রাখতে হবে, যাতে দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ না থাকলেও কোনো সমস্যা না হয়।

বিদ্যুতের বিষয়ে যেহেতু সংশয় থাকছে, তাই মোবাইল, ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক, চার্জার লাইট আগে থেকেই ফুল চার্জ দিয়ে রাখুন। প্রয়োজনের সময়ে যেন সমস্যায় না পড়তে হয়।

মোববাতি সংগ্রহে রাখতে হবে

এবারের ঘূর্ণিঝড়ের আকার ও বেগ তুলনামূলক বেশ বড়। সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে কিছু এলাকার মানুষকে ঘরবন্দী অবস্থায় পড়তে হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য স্থানের মানুষরাও বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হতে পারেন। তাই ঘরে আগে থেকেই শুকনো খাবার ও সুপেয় পানি সংগ্রহ করে রাখা প্রয়োজন। এতে করে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা সহজ হবে।

জরুরি কাগজপত্র আলমারি বা টেবিলের ড্রয়ারে থাকলেও ওয়াটারপ্রুফ ফাইলে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। শীতের কাপড় প্রস্তুত রাখতে হবে।

বাসার শিশুদের ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। শিশুরা সাধারণত ঝড়-বৃষ্টি ভয় পেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে তারা যেন ভীত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মোবাইল, ল্যাপটপ, পাওয়ার ব্যাংক, চার্জার লাইট ফুল চার্জ করে রাখা প্রয়োজন

যেকোনো সমস্যার জন্য ঘরে ফার্স্ট এইড বক্স তৈরি রাখতে হবে। নিত্যদিনের ওষুধ, জরুরি ওষুধ, ডেটল, ব্যান্ডেজ প্রভৃতি সংগ্রহে রাখতে হবে। টিভি কিংবা রেডিও খবরে প্রতি মুহূর্তের আপডেট শুনতে হবে এবং সেই মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে করণীয়

প্রথমেই ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে এবং ইলেকট্রনিক পণ্য সুইচ অফ করে দিতে হবে। গ্যাস লাইন বন্ধ রাখতে হবে।

বাইরে বিদ্যুৎ চমকানোর সময় পানি ও পানিযুক্ত স্থানের আশেপাশে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ঝড়ের সময় দাহ্য জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘরে ও ঘরের আশেপাশের যেকোনো ধরনের লোহা ও স্টিলের জিনিসপত্র স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রস্তুত রাখতে হবে হারিকেন

বাইরে থাকাকালীন অবস্থায় ঝড় শুরু হলে যতসম্ভব দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে এবং বজ্রপাতের সময় দ্রুত মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে। ঝড়ের মাঝে কোনো অবস্থাতেই জলাশয় তথা পুকুর, খাল, নদীতে অবস্থান করা যাবে না।

বাইরে খোলা ও উঁচু কোনো স্থানে অবস্থান করা যাবে না এবং সম্পূর্ণ উন্মুক্ত স্থানে খোলা ছাতা ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া যেকোনো ধরনের জরুরি প্রয়োজনে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করতে হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর