আশ্রয়কেন্দ্রে না খেয়ে থাকতে হয়, যেতে অনাগ্রহী জেলেরা

, জাতীয়

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-28 23:34:33

মার্চ-এপ্রিল দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে করোনার ঝুঁকি নিয়ে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় মাছ শিকারে নেমেছেন অর্ধ-লক্ষাধিক জেলে। কিন্তু নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ধার-দেনা মাথায় নিয়ে জেলে পরিবারে চলছে চাপা কান্না।

এদিকে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। মেঘনা উপকূলীয় এ জনপদ ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলের মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে।

কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহী উপকূলের মানুষগুলো। জেলেরাতো জোর দিয়ে বলছেন, আশ্রয় কেন্দ্রে যাবেন না। এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে না খেয়ে থাকতে হয়। পরিবেশও ভালো না। তাদের নাম ভাঙিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা সব লুটেপুটে খায়। এতে না খেয়ে দিনযাপন করতে হয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া মানুষগুলোকে। তাই অন্যের পকেট ভর্তি করতে নিজেদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করতে চান না উপকূলের অসহায় মানুষগুলো।

মঙ্গলবার (১৯ মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জেলে ও উপকূলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললে, তারা এসব অভিযোগ করেন।

চরকালকিনি এলাকার জেলে মহিউদ্দিন বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে যাব না। সেখানে গেলে খাবার দেয় না। না খেয়ে থাকতে হয়। সোয়া তোলা চিড়াও ভাগে জোটে না। যারা আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান, তারাই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গাও থাকে না। একজনের ওপর আরেকজন পড়ে। হায়াত থাকলে বাড়িতেই থাকবে। আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে কোনো লাভ নেই।

একই এলাকার জেলে আনোয়ার উল্যাহ বলেন, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এখনো কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। একেবারে বেশি বিপদে না পড়লে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব না। আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে খুব খারাপ পরিবেশে থাকতে হয়। খাবার নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘরেই থাকা ভালো।

আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহী জেলেরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে প্রায় ৬২ হাজার মানুষ জীবিকা অর্জন করেন। মৎস্য অফিসের তালিকাভুক্ত রয়েছেন প্রায় ৫২ হাজার জেলে। এসব জেলের বাসস্থান নদীর আশপাশেই। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেই বিশাল এ জনপদ ঝুঁকিতে থাকে। বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য জেলায় মাত্র ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী এরই মধ্যে ৮২টি খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশেরই পরিবেশ ভালো নয়। উপকূলের মানুষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে জোর করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও গাদাগাদি করে থাকতে হয়।

এদিকে জেলা প্রশাসন ও ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে খাদ্যসামগ্রী সঠিকভাবে হস্তান্তর করা হলেও প্রতিবছরই আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষজনকে খাবার সংকটে থাকতে হয়। অধিকাংশ কেন্দ্রেই আশ্রয় নেওয়া মানুষদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা খাবার দেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপকূলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিবছরই একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তাদের। যে কারণে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর