উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান'। ঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যেই উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। তবুও বরাবরের মতো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কিছুটা নিশ্চিন্ত। কারণ প্রতিবার ঝড় হলেই ঢাল হয়ে বুক পেতে দাঁড়ায় সুন্দরবন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে সুন্দরবন হলো সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ।
বুধবার (২০ মে) বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবন ঘেঁষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। প্রতিবার সুন্দরবনের কারণে দুর্বল হয়ে যায় ঝড়ের গতি। এতে রক্ষা পায় উপকূলের মানুষ।
নাগরিক নেতা কুদরত ই খুদা বলেন, এ অঞ্চলে প্রলয়ঙ্করী সিডর ও আইলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু ছোট ঝড় আঘাত হেনেছে উপকূলে। কিন্তু বারবারই এগুলোর ভয়াবহতা থেকে বাঁচিয়েছে সুন্দরবন। উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয় বিশাল এই বনভূমিতে। সুন্দরবন না থাকলে এই ঝড়গুলোর রূপ হতো আরো ভয়াবহ।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়গুলো উপকূল অতিক্রম করার সময় সুন্দরবনের কারণে গতি হারিয়ে ফেলে। মূলত সুন্দরবনের গাছপালার বাধাতেই ঘূর্ণিঝড়গুলো দুর্বল হতে শুরু করে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনে অভ্যন্তরে থাকা প্রায় দুই হাজার জেলে ইতিমধ্যে বনের বিভিন্ন নদী খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া বনের দুর্গম এলাকায় যে সকল বন কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা তাদেরকে সুবিধাজনক পার্শ্ববর্তী অফিস ভবনে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ছোট বড় ঝড়গুলো থেকে যদি এই সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে। তারপরেও এটি রক্ষায় তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়না।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঘূর্ণিঝড়টি সুন্দরবনের পাশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবার ঝড়ের গতি কমাতে সুন্দরবন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের সবারই উচিত বন সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা। সুন্দরবন বাঁচলে, আমরা বাঁচবো।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন নয়নাভিরাম সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে বনভূমি ৪ হাজার ৮৩২ বর্গ কিলোমিটার এবং জলাভূমি ১ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। এই বনভূমি ও জলাভূমিতে বাস করে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার সময়েও সুন্দরবন রক্ষা করেছে উপকূলকে। এবার সুন্দরবন একইভাবে ঢাল হিসেবে রক্ষাকবচ হবে এ প্রত্যাশা সবার।