'বাঁচলে ঘরেই বাঁচমু, আশ্রয় কেন্দ্রে যামু না'

, জাতীয়

হাসান মাহমুদ শাকিল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-12 23:22:17

'বাঁচলে ঘরেই বাঁচমু, আর মরলে আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও মরমু। আল্লাহ যে সময় হরান লই যাইবো। ঘূর্ণিঝড় আইলে বউ হোলা-মাইয়া লই ঘরেই থাকমু। আশ্রয় কেন্দ্রে যামু না'। এমনটাই বলছিলেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মতিরহাট এলাকার জেলে আনোয়ার হোসেন মাঝি।

ঘূর্ণিঝড় আম্পান থেকে নিজেকে সুরক্ষা করতে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বললে তিনি আরো বলেন, 'দুই মাস অনেক কষ্টে আছিলাম। কেউ একটু সাহায্য করেনো। অন নদীতে গেলেও ইলিশ মাছ হাওয়া যায় না। ৮-১০ ঘণ্টা নদীতে থাই হুদা ২৬শ’ টিয়ার মাছ বেইচছি। এডারতন হানাদার ও লগে যেগুনে গেছে হেগুনরেও দিতে অইবো'।

আনোয়ার হোসেন জানান, নদীতে মাছ নেই। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছেন। মে মাসের ১ তারিখ থেকে নদীতে নেমেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার কারণে স্ত্রী-ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খুব সতর্কভাবে চলতে হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় এলে আবার কয়েকদিন কর্মহীন থাকতে হবে। কিভাবে তার সংসার চলবে? কিভাবে ধার-দেনা পরিশোধ করবে। ভাগ্যটা খারাপ বলে এই ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়েন তিনি।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের বিষয়ে আনোয়ার জানান, ৪-৫ বছর আগে ঘূর্ণিঝড়ের সময় জোর করে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানে গেলে আরো কষ্ট বেশি। ঠিকমত খাবার দেয় না। এখন আবার করোনার ঝুঁকি। সেখানে বিভিন্ন পরিবার ও এলাকার মানুষ থাকবে। এছাড়া ঘরটি খালি পড়ে থাকে। এ সুযোগে চোরের উৎপাত বেড়ে যায়। সবমিলিয়েই আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই তার। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তিনি বাড়িতেই থাকবেন।

জেলার রামগতি, কমলনগর, সদর ও রায়পুর উপজেলাকে ঘিরে আছে মেঘনা নদী। প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ উপকূলের বিশাল জনপদ ঝুঁকিতে থাকে। সারা বছর নদী ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে উপকূলের মানুষগুলো কঠোর হয়ে পড়েছে। এজন্য খুব বেশি ক্ষতির সম্মুখীন না হলে কেউই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায় না।

তবে কিছু সময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোর করে উপকূলের বাসিন্দাদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর