রাঙামাটির মাতৃমঙ্গলে মৃত ঘোষণা, জেনারেলে সুস্থ নবজাতক প্রসব

, জাতীয়

আলমগীর মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি | 2023-09-01 01:59:14

প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা এক প্রসূতির আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের মাধ্যমে পেটের সন্তানকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন রাঙামাটি শহরস্থ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র মাতৃমঙ্গলের চিকিৎসক ডা. লেলিন তালুকদার।

কাগজপত্রের মাধ্যমে শিশুটিকে মায়ের পেটেই মৃত ঘোষণা করেন এই চিকিৎসক। পরে ওই প্রসূতিই পরবর্তীতে রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে জন্ম দিলেন ফুটফুটে সুস্থ এক নবজাতক। বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিশুটির পিতা-মাতাসহ খোদ চিকিৎসক ও নার্সরা।

মাতৃমঙ্গলে এই ধরনের খামখেয়ালিপনা রিপোর্টের মাধ্যমে জীবিতকে মৃত ঘোষণা করে দেওয়া চিকিৎসকের বিচারও দাবি করেছেন ভূক্তভোগীর স্বজনরা। বিষয়টি নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে রাঙামাটি শহরে। স্বাস্থ্য বিভাগেও এই ঘটনা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

তবে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. লেলিন তালুকদার জানিয়েছেন, এটা হতেই পারে। কারণ আল্ট্রাসনোগ্রামের সময় হৃদয়স্পন্দন বন্ধ থাকায় এমন রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।

ভূক্তভোগী প্রসূতি নারী প্রভা চাকমা জানান, সোমবার (১৮ মে) ব্যথা উঠায় স্বামীকে নিয়ে নানিয়ারচরের চৌদ্দমাইল থেকে অনেক কষ্টে সোমবার বিকেলে রাঙামাটি এসে মাতৃমঙ্গলে (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) যাই। সেসময় সেখানকার একজন নার্স আমার পেটে হাত দিয়েই বলে দেয় যে, বাচ্চা নড়াচড়া করছেনা। আমি বললাম বাচ্চা তো নড়ছে আমি টের পাচ্ছি। কিন্তু আমার কথা শুনিনি এবং কিছুক্ষণ পরে ডা. লেলিন আসলেন এবং আমার আল্ট্রাসনোগ্রাম করালেন। তিনিও আল্ট্রা রিপোর্টে আমার পেটের বাচ্চা মারা গেছে বলে লিখে দিয়ে ওইদিন বিকেলেই আমাকে জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করে দিয়েছেন। সন্ধ্যা ছয়টায় আমি জেনারেল হাসপাতালে এসে ভর্তি হই।

জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোগীর পেটের বাচ্চা মারা গেছে বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে রেফার্ড পত্র পাঠিয়েছিলেন ডা. লেলিন তালুকদার। কিন্তু আমাদের এখানে মঙ্গলবার (১৯ মে) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে একটি সুস্থ ছেলে সন্তান ভূমিষ্ট করেন ওই রোগী।

এদিকে, রাঙামাটির স্বাস্থ্য বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, আল্ট্রা রিপোর্টে দেখিয়েছে বাচ্চাটা পেটেই মৃত অবস্থায় রয়েছে। তাহলে সেই বাচ্চাটিকে আবার রেফার্ড করল কেন? উক্ত নারী মাতৃমঙ্গলে যাওয়ার মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে বাচ্চা মারা গেছে জানিয়ে জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ রোগিকে সেখানে কিছুক্ষণ রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারতেন ডা. লেলিন।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে  রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই। যদি এই ধরনের হয়ে থাকে তা অবশ্যই দুঃখজনক।

বিগত বছরগুলোতে ডা. লেলিনের বিরুদ্ধে এই ধরনের আরো কয়েক ডজন অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর এক প্রসূতি নিরূপা তংচঙ্গ্যাকে ভূল চিকিৎসায় মেরে ফেলার অভিযোগ করেছিলো তার পরিবার। ২০১৭ সালের নভেম্বরের ২০ তারিখেও এই চিকিৎসকের ভুলে জেনি আক্তার (২৫) নামে এক প্রসূতি মা ও তার গর্ভের সন্তানের মুত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার স্বজনরা। এরআগে বিগত ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর ডা. লেনিনের বিরুদ্ধে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অবহেলা, রোগীদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, অমানবিক ব্যবহারসহ নানা অভিযোগের কারণ অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত রাঙামাটি এসে তদন্ত করে। তবে সে তদন্ত প্রতিবেদনের কোন হসিদ পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর