যশোরে রেকর্ড ১৬১ কিমি গতিতে ঝড়, ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 06:24:28

ঘূর্ণিঝড় আম্পান আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মধ্যরাতে ঝিনাইদহ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

এর ফলে ঘূর্ণিঝড় আম্পান সাতক্ষীরায় তাণ্ডবের পর, আঘাত হেনেছে যশোরে। সাতক্ষীরা থেকে যশোরে এরমধ্যে প্রায় ২/৩ ঘণ্টা সময় নিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, একমাত্র প্রচণ্ড বৃষ্টিতেই দুর্বল হতে পারে আম্পান। তাছাড়া এখন অপেক্ষা করা ছাড়া পথ নেই।

বজলুর রশিদ বলেন, একটু আগে যশোরের বাতাসের গতিবেগ ৯০ নটিক্যাল মাইল ১৬৭ কিলোমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। যা সাতক্ষীরার ১৫১ কিলোমিটার রেকর্ডকে ভেঙে ফেলেছে।

তবে আমরা আশা করছি, রাতের মধ্যেই বাংলাদেশ অতিক্রম করবে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে থাকতে পারে ভারি বৃষ্টিপাত।

এদিকে যশোর চৌগাছা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে গাছ পড়ে মা ও মেয়ে নিহত হয়েছেন। বুধবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, চৌগাছার চাঁদপুর গ্রামের মৃত ওয়াজেদ আলীর স্ত্রী খ্যান্ত বেগম (৪৫) ও তার কিশোরী মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১৩)।

যশোরের কেশবপুরের বাসিন্দা ফিরোজা বেগম জানিয়েছেন, এইরকম ঝড়ের তাণ্ডব আগে দেখিনি। বাইরে প্রচণ্ড শব্দ। কারো কারো ঘরের চালা উড়ে গেছে। তীব্র গতির ঝড়ে গাছপালা উপড়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে যশোরে বিভিন্ন  এলাকায় ঘরবাড়ি, গাছপালা, বৈদ্যুতিক লাইন ও দোকানপাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যা রাতে শুরু হওয়া এ ঝড়ে যশোরে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুৎতিক খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় ক্যাবল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেটের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যশোর বেনাপোল সড়কের শতবর্ষী অনেক গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়েছে। এই সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এলাকাবাসী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, 'যশোরের মাঠে কোনো ধান নেই। ঝড়ের আগেই সব ধান কেটে কৃষকের ঘরে উঠানো হয়েছে। তবে ঝড়ের আম-লিচু ও সবজির কিছু ক্ষতি হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের ৩৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অতিক্রমের সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের  একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে।  ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। সাগর উত্তাল থাকবে।

এ অবস্থায় মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৯ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিমি বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর