ট্রাফিক সপ্তাহে নজরে পড়েনি অবৈধ ৫ হাজার সিএনজি অটোরিকশা!

সিলেট, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 23:00:29

সিলেট: সিলেটে বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে ৩ হাজার ৭৫৮টি পরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে প্রায় ২২ লাখ টাকা। দেশব্যাপী আলোচিত এ অভিযানে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় চালিত ৫ হাজার রেজিস্ট্রেশন বিহীন (অবৈধ) সিএনজি অটোরিকশা নজরে পড়েনি ট্রাফিক পুলিশের। অথচ ‘আবেদিত’ ‘অনটেস্ট’ লেখা এসব সিএনজি অটোরিকশা বুক ফুলিয়ে ঘুরছে নগরীর পথে পথে।

সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি নং-৭০৭) ও সিলেট জেলা অটোরিকশা চালক শ্রমিকজোটের (রেজি নং-২০৯৭) ৮টি শাখা রয়েছে। এ সব শাখার অধীনে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিএনজি অটোরিকশা।

অভিযোগ রয়েছে, মহানগর পুলিশের কতিপয় অসাধু সদস্যদের সঙ্গে সমঝোতা করেন এসব স্ট্যান্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। পুলিশের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন ‘টোকেন বা স্টিকার’। এ সব টোকেন বা স্টিকার দেখালেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। বিনিময়ে প্রতিটি স্ট্যান্ড থেকে মাসোয়ারা নেয় তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমার সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের ওভারব্রিজের নিচে শ্রমিকজোট শাখার সিএনজি অটোরিকশার একটি স্ট্যান্ড রয়েছে। এই শাখায় প্রায় ৮শ গাড়ি রয়েছে রেজিস্ট্রেশন বিহীন। টোকেনের মাধ্যমে প্রতিটি গাড়ি থেকে মাসিক ১২শ টাকা নেয়া হয়। ওই স্ট্যান্ড থেকে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, ঢাকা দক্ষিণ রোডে অবাধে চলে রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়ি।

দক্ষিণ সুরমার ভূঁইয়ার পাম্প থেকে বিশ্বনাথ, জগন্নাথপুর, গোয়ালাবাজার, তাজপুর বাজার, জালালপুর বাজার, গহরপুর বাজার ও বালাগঞ্জ রোডে চলে প্রায় ৮শ, নগরীর শিবগঞ্জ-সাদিপুর ফিলিং স্টেশন শাখায় চলে দেড়শ সিএনজি অটোরিকশা।

রেজিস্ট্রেশনবিহীন ৫ শতাধিক গাড়ি চলছে টিলাগড় শাখা থেকে। মেজরটিলা ও পীরের বাজার ফিলিং স্টেশন স্ট্যান্ড থেকে চলে ৪শ অটোরিকশা। সিলেট জেলা অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি নং-৭০৭) অন্তর্ভুক্ত আম্বরখানা ও সালুটিকর শাখায় অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা চলছে প্রায় দেড় হাজার। আম্বরখানা শিবেরবাজার সড়কেও চলছে সমানভাবে।

শমসু মিয়া নামে এক চালক জানান, যদি কখনো পুলিশ গাড়ি আটক করে তবে টোকেন দেখালেই ছেড়ে দেয়। ওই টোকেনে লেখা থাকে স্ট্যান্ডের নাম ও শাখা নাম্বার এবং টোকেনের বিপরীত সাইডে চাঁদার সংকেত চিহ্ন।

তিনি জানান, শাখার সভাপতির মাধ্যমে পুলিশের পক্ষ থেকে মাসিক চাঁদার বিপরীতে স্টিকার ও টোকেন সরবরাহ করা হয়। এই টোকেন গোপনীয়তার মাধ্যমে রাখা হয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক শাখা থেকে সরবরাহকৃত তথ্যমতে গত ৬ আগস্ট থেকে পরিচালিত বিশেষ ট্রাফিক সপ্তাহের ১০ দিনে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৭৫৮টি মামলা করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৯৪টি রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল। তবে কোথাও একটি রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিএনজি অটোরিকশা আটকের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

সিলেট জেলা অটোরিকশা চালক শ্রমিকজোটের (রেজি নং-২০৯৭) সভাপতি মতছির আলী বলেন,‘অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

সিলেট জেলা অটোরিকশা সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি নং-৭০৭) সভাপতি জাকারিয়া বলেন,‘মফস্বল এলাকায় অনেক গাড়ি ও চালক রয়েছে রেজিস্ট্রেশন-লাইসেন্সবিহীন, শহরে খুব একটা এদের চোখে পড়েনা।’

বাংলাদেশ রোড টান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) সিলেটের সহকারী পারিচালক (ইঞ্জি) প্রকৌশলী কেএম মাহাবুব কবীর বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ি কোনোভাবেই সড়কে চলতে পারে না। আমরা সাধ্যমতো মোবাইল কোর্ট করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়।’

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘আমরা যখন অভিযান পরিচালনা করি তখন তারা ছিল না।’

প্রতিটি থানা এবং পুলিশের সামনে দিয়ে এসব গাড়ি চলে কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াহাব বলেন,‘রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ি ধরার জন্য ওসিদের নির্দেশ দেব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর