ঝুঁকি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ

, জাতীয়

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-25 20:00:29

করোনা নামক অদৃশ্য শক্তি কেড়ে নিয়েছে ঈদুল ফিতরের আনন্দ। সাধারণত ঈদের ছুটি কাটাতে এই সময় শত কষ্ট উপেক্ষা করে গ্রামে ফেরেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। করোনার কারণে গণপরিবন বন্ধ থাকায় এবারের ঈদ আনন্দ পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করতে গ্রামে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি অনেকের। তবে শেষ মুহূর্তে ভ্যানযোগে ভেঙে ভেঙে ও অ্যাম্বুলেন্সে গ্রামে ফেরার চেষ্টা করছে অনেকেই।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ গণপরিবন। শুধু তাই নয় গ্রামে ফেরা রোধে প্রতিটি পয়েন্টে পয়েন্টে বসানো হয়েছিলো চেকপোস্ট। তবে শেষমেষ স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে ব্যক্তিগত যানে গ্রামে ফেরার অনুমতি দেয় প্রশাসন। আর এতেই শেষ সময়ে গ্রামে ফেরার চেষ্টা করছে সাভারে বসবাসরত অনেকেই।

অনেকে ভ্যানে করেও গ্রামের পথে রওনা হয়েছেন

শনিবার (২৩ মে) সকালে সাভার ও আশুলিয়ার সাভার বাস স্ট্যান্ড, বাইপাইল, নবীনগর, শ্রীপুর, জিরানীবাজারসহ বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, গাড়ির আশায় পায়ে হেঁটে, ভ্যানযোগে এক স্ট্যান্ড থেকে অন্য স্ট্যান্ডে যাচ্ছে নাড়ীর টানে ঘরমুখো অনেকেই। চেষ্টা করছে পিকআপ, ট্রাক অথবা অ্যাম্বুলেন্সে করে বাড়ি ফেরার।

বাইপাইল বাস স্ট্যান্ড থেকে ছোট একটি ব্যাগ কাঁধে করে হেঁটেই রওনা করেছেন হামজালা নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, তিন দিন আগে বাড়ি যাওয়ার  জন্য বের হয়েছিলাম। পুলিশ যাইতে দেয়নি, ফেরত পাঠিয়েছে। আজ শুনলাম স্বাস্থ্য সম্মতভাবে নাকি যাওয়া যাবে তাই আবার বের হয়েছি। গ্রামে বৃদ্ধ মা আর বাবার আমি ছাড়া কেউ নেই, তাই ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছি। বাবা আর মায়ের সাথে ঈদের দিন কাটাতে পারলে বাড়ি ফেরার কোন কষ্ট মনে থাকবে না।

শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফিরতে বেছে নিয়েছেন পিকআপ

বাড়ি যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে উঠেছেন মোর্সেদা নামের এক নারী। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি সকাল ৭টা থেকে এক স্ট্যান্ড থেকে আরেক স্ট্যান্ড হেঁটেই চলেছি। এ পর্যন্ত ৬টি বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করে এসে অবশেষে বাড়ইপাড়া এলাকায় এই অ্যাম্বুলেন্সে উঠলাম। ভাড়া তিন ডাবল টাকা, তবুও বাড়ি যেতেই হবে। ছুটি পেয়েছি ৮ দিন। যাদের জন্য জীবনের মায়া তুচ্ছ করে ঢাকায় কাজ করছি তারা ছাড়া ঈদ কিভাবে করা যায় বলেন।

অ্যাম্বুলেন্সের চালক রিমু বলেন, গাড়ি নিজের কিছু টাকা জামানত দিয়ে কিস্তিতে কিনেছি। বিভিন্ন হাসপাতালসহ অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাই আমরা। এখন কোন রোগী পাওয়া যায় না। করোনাভাইরাসের ভয়ে হাসপাতালেই যাইতে চায় না কেউ। আর করোনা রোগীদের আলাদা অ্যাম্বুলেন্সে করে বহণ করা হয়। এই করোনার ভয়ে গাড়িতেও উঠতে চায় না মানুষ। আমিও অনেকদিন ধরেই কোন ট্রিপ পাচ্ছি না। গাড়ির কিস্তিও দিতে পারি নাই। তাই আজ বের হয়েছি ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষ পৌঁছে দেবো আমার এই অ্যাম্বুলেন্সে করে। অন্তত গাড়ির কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হবে তাই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বের হয়েছি।

এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির (আশুলিয়া থানা কমিটি) সভাপতি লায়ন মো: ইমাম বলেন, ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফেরা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজেকে ও নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে হলেও গ্রামে যাওয়া থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ আপনার কাছ থেকেই আপনার বৃদ্ধ মা-বাবা ও পরিবার আক্রান্ত হতে পারে এই ভাইরাসে। তাই যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ পালন করলে আমাদের পরিবার সুরক্ষিত থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর