করোনায় টুপি রফতানি বন্ধ, ঈদ আনন্দ বঞ্চিত নারী শ্রমিকরা

, জাতীয়

আমিনুল ইসলাম জুয়েল, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পীরগাছা (রংপুর) | 2023-08-28 03:24:10

টুপি শ্রমিকদের নিপুণ হাতের কারুকার্য সম্বলিত টুপি গত কয়েক বছর থেকে ওমান, সৌদি আরব ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে আসছে। আর এতে করে গ্রামীণ হতদরিদ্র প্রায় ২৫ হাজার নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গৃহস্থলির কাজের পাশাপাশি টুপি তৈরি থেকে আয় দিয়ে পরিবারগুলো দারিদ্র্য জয় করলেও চলমান করোনা পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছে। টুপি রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের মজুরিও বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদ আনন্দ বঞ্চিত হয়ে পড়েছে হতদিরদ্র পরিবারগুলো।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার নব্দিগঞ্জ, ইটাকুমারীর হাসনা গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার নারী এ কাজ করছেন।

শুধু পীরগাছা উপজেলায় নয়, রংপুর সদর, কাউনিয়া, লালমনিরহাটের তিস্তার চর, কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীরা টুপি বানিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করেছেন।

গত চার মাস থেকে টুপি রফতানি বন্ধ থাকায় কারখানার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। তারা টুপি তৈরির সঙ্গে জড়িত গ্রামীণ মহিলাদের পারিশ্রমিক দিতে পারছেন না। নিজেদের ঘরেই লাখ লাখ টাকার টুপি পড়ে রয়েছে। তাই তারা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ দাবি করেছেন।

রোববার (২৪ মে) সরেজমিনে জানা যায়, সুতা, কাপড়, পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ, মজুরিসহ অন্যান্য খরচ মিলে একটি টুপিতে খরচ পড়ছে একহাজার টাকা। বিদেশে রফতানির পর সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি টুপিতে ২০০ থেকে ২২০ টাকা লাভ হয়।  এই টুপিতে উন্নতমানের কাপড়ের ওপর বাহারি সুতার কাজ করা হয়। ফলে কারুকার্য বেশি হওয়ায় টুপির দাম একটু বেশি পড়ছে। দাম বেশী হওয়ায় এ টুপি দেশের বাজারে তেমন বিক্রি হয় না। বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই রফতানিযোগ্য করে এসব টুপি তৈরি করা হয়।

করোনার কারণে এই ঈদে বিদেশের বাজারে টুপি রফতানি বন্ধ রয়েছে।

কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের তহুরা বেগম জানান, স্বামী দিনমজুরি দিয়ে সংসার চালাত। তিনি মারা যাওয়ার পর খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্টে কেটেছে সংসার। এরপর হাফেজ আউয়ালের টুপি তৈরির কারখানায় দেড় মাস প্রশিক্ষণ নেন। শুরু করেন টুপি বানানোর কাজ। তিনি জানান, তার কাজ হচ্ছে টুপির চারদিকে মোটা সুতা ঢোকানো। যাকে আঞ্চলিকভাবে বলা হয় হাসু। এতে তিনি পান প্রতিটি টুপির জন্য ২০ টাকা। এতে তার মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয় হতো। কিন্তু করোনার কারণে চার মাস থেকে কোন পারিশ্রমিক পাচ্ছি না।

মাহমুদিয়া হস্তশিল্প টুপি (এমএইচ টুপি) কারখানার মালিক হাফেজ আবদুল আউয়াল জানান, ওমানসহ বিভিন্ন দেশের কয়েক জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাদের কয়েক বছর আগে চুক্তি হয়েছে। তখন থেকে সরাসরি তারা নিজেরাই ওমানে টুপি রফতানি করে আসছেন। করোনার শুরুর দিকে ৫০০ পিস টুপির একটি চালান দুবাইতে আটকে যায়। তখন থেকে নতুন রফতানি করতে না পারায় গত চার মাসে তৈরি সব টুপি ঘরে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। করোনার আগে গড়ে প্রতি মাসে এক হাজার থেকে  ১৫শ’ টুপি রফতানি করা হয়েছে। কিন্তু চলমান করোনার প্রাদুর্ভাবে রপ্তানি বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছি।

তিনি বলেন, চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারি ভাবে সহজ শর্তে ঋণের প্রয়োজন। ঋণ না পেলে এ শিল্প টিকে রাখা সম্ভব হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর