গাজীপুরে দোকান বাকীর জন্য প্রাণ দিলেন পোশাক শ্রমিক

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর | 2023-09-01 00:25:46

গাজীপুরের কাশিমপুরে দোকানের বাকী পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এক পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে আহতের পর তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রোববার (২৪ মে) ভোরে কাশিমপুরের উত্তর লতিফপুর এলাকা থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধারের পর বিকেলে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

নিহত আরিফুল রহমান তুহিন (২৮) ঝালকাঠির রাজাপুর থানার সতোরিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফের ছেলে।

তিনি উত্তর লতিফপুর এলাকার ফরহাদ হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থেকে বিগবস নামক একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মৃত তুহিন স্থানীয় এমদাদ হোসেনের মুদি দোকান থেকে বাকীতে বাজার করতেন। গত দুই মাস ধরে করোনাভাইরাসের কারণে অফিস থেকে বেতন-বোনাস কম পাওয়ায় দোকান বাকী সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে পারেনি তুহিন। এ জন্য দোকান মালিক তাকে মারধর করেন। সকালে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক আক্তারুজ্জামান জীবন জানান, শনিবার (২৩ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবু সাইদ ও জাকির হোসেন নামে দুই যুবক রক্তাক্ত তুহিনকে ধরে বাসায় তার কক্ষে রেখে যায়। তখন তুহিনকে চিৎকার করে বলতে থাকে তাকে কেন মারা হলো।

তিনি আরও জানান, তুহিন অনেকক্ষণ চেঁচামিচি করার পর তার কক্ষ থেকে কোনো শব্দ আসছিল না। পরে পুলিশকে খবর দিলে কক্ষের সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে।

স্থানীয় নূর হোসেনীয় জামে মসজিদের খতিব আসাদুল্লাহ জানান, তিনি মসজিদে ছিলেন। ডাক-চিৎকার শুনে এগিয়ে তুহিনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।

অভিযুক্ত এমদাদ হোসেনের দাবি, তুহিনের কাছে তিনি ৩ হাজার টাকা দোকান বাকি পেতেন। শনিবার (২৩ মে) দেড় হাজার টাকা পরিশোধ করেছে তুহিন। তুহিনকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

তুহিনকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া আবু সাইদ জানান, রাত ১০টার দিকে তুহিনকে আহত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি ও জাকিরসহ কয়েকজন তাকে বাসায় পৌঁছে দেন। সকালে তুহিনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

নিহতের মা মিনুর অভিযোগ, শনিবার (২৩ মে) রাত ১০টার দিকে তুহিন তাকে ফোন করে বলতে থাকে- 'মা আমাকে বাঁচাও দোকানদার আমাকে মেরে ফেলবে। আমার শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।'

তিনি বলেন, দোকান মালিক এমদাদ তাকে ফোন করে বলেছে- আপনার ছেলেকে বাসায় যেতে বলেন। না হয় তার কপালে খারাপ আছে। তার সঙ্গে কথা বলার সময় দূর থেকে তুহিনের কান্নার শব্দ ভাসছিল। তখন তুহিন মা-মা করে চিৎকার করছিল।

তুহিনের মা আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয় তুহিন আত্মহত্যা করেছে।

মিনুর অভিযোগ, তুহিন আত্মহত্যা করেনি। তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি প্রশাসনের কাছে ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেছেন।

কাশিমপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম জানান, রাতেই তুহিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে তুহিনের শরীরে আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ নেই। নিহতের ঘাড়ে ও হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মর্গে আসার ২৪-৩৬ ঘণ্টা আগে তুহিনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় এটি আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে প্রকৃত কারণ উল্লেখ থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর