কষ্ট যাদের পিছু ছাড়ে না

, জাতীয়

গনেশ দাস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া | 2023-08-28 11:52:49

এক সময় ধনী কৃষক ছিলেন লালন ফকির। কিন্তু যমুনা নদীর ভাঙনে এখন নিঃস্ব। গত ২৬ বছরে তাকে ২৫ বার ভিটা-বাড়ি পাল্টাতে হয়েছে। বর্তমানে বগুড়ার সারিয়াকান্দী উপজেলার রৌহদহ গ্রামের যমুনা নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধে একটি ঝুপড়ি ঘরে দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন।

সোমবার (২৫ মে) দুপুরে তার বাড়িতে একজন অপরিচিত মানুষের কণ্ঠ শুনে ঝুপড়ি ঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে বার বার উঁকি দিচ্ছিলেন লালন ফকির। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে নিজের জীবনের কষ্টের কথা বলতে থাকেন তিনি।

লালন ফকির বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এক সময় সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা ইউনিয়নের আট বাড়িয়া ফকির পাড়া গ্রামের ধনী কৃষক ছিলাম। কিন্তু ২৫ বার যমুনা নদীর ভাঙনে এখন আমি নিঃস্ব। বর্তমানে আমি পরিবার নিয়ে ঝুপড়ি ঘরে থাকি। জেলের কাজ করি। তবে করোনার কারণে গত দুইমাস যাবৎ ঘরে বেকার বসে আছি। হাতে কোনো টাকা নাই। আজ ঈদের দিন। অথচ ঘরে ভালো কিছু রান্নার আয়োজন করতে পারি নাই। ছোট ছোট সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। আমি এক হতভাগা বাবা।’

কথাগুলো বলতে বলতেই কান্না করে দেন তিনি। শুধু লালন ফকিরই নয়, সারিয়াকান্দী উপজেলার রৌহদহ গ্রামের যমুনা নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধে বসবাসরত প্রতিটি পরিবারের গল্পই এমন বিষাদে ভরা।

বেড়িবাঁধে বসবাসকারী জেলে রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার স্ত্রী মিতি ঘরে বসে আছেন অসহায়ের মতো। সকাল থেকে চুলা জ্বলেনি তাদের। স্বামী রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের মুখে একটু অন্য জোগাতে যাকে সামনে পাচ্ছেন তার কাছেই হাত পাতছেন।

রৌহদহ গ্রামের যমুনা নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাসিন্দারা।

সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা তীর সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা যায়, এখানে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো সবাই একাধিকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এক সময় প্রত্যেকেরই আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু রাক্ষুসী যমুনা তাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। এখন কষ্ট যেন তাদের পিছু ছাড়ে না।

জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ২ মাস ধরে তারা কর্মহীন। সাহায্য সহযোগিতা বলতে কেউ দুইবার, আবার কেউ একবার ৮ কেজি করে চাল পেয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে।

বেড়িবাঁধে বসবাসকারীরা জানান, এই এলাকার এমপি আব্দুল মান্নান মারা যাওয়ার পর তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। গত মার্চের ২৮ তারিখ উপনির্বাচনের দিন ঠিক হলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে এলাকায় আর কোনো এমপি প্রার্থীর দেখা নেই।

সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হেদায়েতুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ অনুযায়ী দুস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে যে পরিমাণ ত্রাণ দরকার, সে পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর