খাদ্য সংকটে ঘরবন্দি করোনারোগী, সাহায্যে নেই কেউ

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর | 2023-08-27 19:55:21

‘সকালে হঠাৎ অচেনা নম্বর থেকে এই প্রতিবেদকের মোবাইল নম্বরে কল এসেছে। কল ধরতেই বলে উঠলো ভাই আমি রায়হান (ছদ্মনাম)। আপনি তো আমার বিষয়টি জানেন। ‘কোন বিষয়’ জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, আমি ও আমার ভাই করোনা পজিটিভ। গত কয়েকদিন আমরা ঘরে বন্দি। সাথে আরও ৪টি পরিবারকে লকডাউন করে রাখা হয়েছে। আমরা খাদ্য সংকটে আছি। কেউ আমাদের খোঁজও নিচ্ছে না। যতবারই চেষ্টা করছি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ফোন বন্ধ পাচ্ছি। আমাদের জন্য কিছু করেন প্লিজ’।

রায়হান লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ওই ছাত্র প্রতিবেদকের পূর্ব পরিচিত।

জানা গেছে, রায়হানের বড় ভাই ক্যান্সারে আক্রান্ত। গত কয়েকদিন তার শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় কলেজছাত্র। কিন্তু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, আগে করোনা পরীক্ষা করে নিতে হবে। সেই ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। সে লক্ষে দুই ভাই ২১ মে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়। পরে তাদের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসে। তাদেরকে সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের ছিলাদী গ্রামের বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ৪টি পরিবারকে লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে করোনা আক্রান্ত দুইভাইসহ লকডাউনে থাকা ৪টি পরিবারকে ভালো চোখে দেখছে না আশপাশের লোকজন। নিজের বাড়ির পুকুরও ব্যবহার করতে দিচ্ছে না ওই ৪ পরিবারের সদস্যদের। ওই দুইভাই ঘর থেকেই বের হচ্ছে না। ঘরেই কেটেছে তাদের ঈদ।

অন্যদিকে সমাজের মানুষ তাদেরকে ভালো চোখে না দেখায় কেউই বিন্দুমাত্র সাহায্য করছে না। বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় বাজার সদাইও করতে পারছে না তারা। এতে খাদ্যসংকটে রয়েছে পরিবারগুলো। এজন্য কুশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে কল দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাহলে তারা যাবে কার কাছে। নিজেরাও বাজারে যেতে পারছে না। আবার তাদের সহযোগিতায় কেউ এগিয়েও আসছে না। তাহলে তো তারা না খেয়েই মারা যাবে।

কলেজছাত্র রায়হান বলেন, আমরা দুই ভাই আক্রান্ত। তাই ঘর থেকে বের হচ্ছি না। ঠিকমতো নিয়ম পালন করছি। কিন্তু আমাদের কারণে লকডাউনে থাকা ৪টি পরিবারও খুব কষ্টে আছে। বাড়ির পুকুরটিও তারা ব্যবহার করতে পারছে না। ঘরের সামনেই দোকান, সেখানেও কিছু কিনতে যেতে পারছে না। ঘর থেকে বের হলেই মানুষ নানান কথা শুনিয়ে দেয়। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুর রিদোয়ান আরমান শাকিলকে একাধিকবার ফোন করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। বন্ধ পাওয়া গেছে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও ইউপি সদস্য মোহাম্মদ মুসলিমের মোবাইল ফোন নম্বর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর