পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ, ডুবেছে ধান ও ভুট্টা

, জাতীয়

নাইমুর রহমান, ডিসট্রিক্ট করেসপনডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নাটোর | 2023-08-31 19:21:20

প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী ঝড়-বৃষ্টিতে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রাম উপজেলায় ধান এবং ভুট্টার ক্ষেত পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের প্রবেশ মুখে বাঁধ দিয়ে পুকুর খনন করায় সরছে না ক্ষেতের পানি।

কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, সিংড়ায় ৫০০ থেকে ৬০০ হেক্টর ও বড়াইগ্রামে ৬ হেক্টর জমির পাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া সিংড়ায় প্রায় ৪৫ হেক্টর জমির ভুট্টা পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কৃষকদের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।

শুক্রবার (২৯শে মে) সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় সিংড়া উপজেলার শেরকোল, হাতিয়ান্দহ ও কলম ইউনিয়নের মধ্যবর্তী ভাষাউরা, পচাকান্দা, খামারকান্দা, লক্ষিতলা ও শৈলমারী বিলে ও বিলগুলোর নিকটবর্তী শ্রীরামপুর, কংসপুর, সোনাপুর, পমগ্রাম, পুঠিমারী, কুশাবাড়ি, খাগোরবারিয়া, নতুনপাড়া, বড়শাঐল, পাটশাঐল, হাজিপুরসহ ২০টি গ্রামের কয়েকশ কৃষকের বিলম্বিত পাকা বোরো ধান পানিতে ডুবে রয়েছে।

ডুবে যাওয়া ভুট্টা তোলা শেষে বাড়ি নেওয়া হচ্ছে 

পুঠিমারী গ্রামের কৃষক মোক্তার হোসেন বলেন, ‘বিঘা প্রতি ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ করে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলাম। ফলনও হয়েছিল ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে।’

পমগ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘বিলম্বিত জাতের ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। তাই ধান কাটার সময়ও দেরিতে আসে। কিন্তু এবার ধান কাটার সময় ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়ে। বিলের মুখে বাঁধ দিয়ে পুকুর করায় ওই পানি আর নামতে পারছে না।’

কৃষকরা বলছেন, বৃষ্টির পানি পার্শ্ববর্তী লক্ষীতলার মরাগাঙ্গীনা ও পুঠিমারীর গদাই নদীর দিকে প্রবাহিত করতে পারলে তাদের এ দুর্ভোগ থাকবে না।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পুঠিমারী, শৈলমারী, কুশাবাড়ি ও সোনাপুর-পমগ্রাম এলাকায় ৫০০ থেকে ৬০০ হেক্টর জমির ধান বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানি বিল থেকে বের হওয়ার জায়গাগুলো বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।’

অনেকে এখনো ধান কাটা শেষ করতে পারেননি

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, উপজেলায় এ বছরে ৪ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হেক্টর জমির ধান অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

এদিকে, সিংড়া উপজেলার প্রায় ৪৫ হেক্টর ভুট্টার ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। শ্রমিক সংকট ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ডুবে যাওয়া ভুট্টা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ভুট্টা চাষিদের অভিযোগ, ডাহিয়া ইউনিয়নের লঘুকদমা মৌজার বড়ছেঁরা খাল ও বেড়াবাড়ি থেকে বিল হরিবাড়ির সিঙ্গারখালের মুখ বন্ধ থাকায় জমির পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এতে এই ইউনিয়নের সহস্রাধিক ভুট্টাচাষি বিপাকে পড়েছেন।

ডাহিয়া গ্রামের ভুট্টাচাষি আবু হানিফ জানান, তার ২২ বিঘা জমির ভুট্টা এখন পানির নিচে নিমজ্জিত। পানি আটকে থাকায় ভুট্টা সংগ্রহ করতে পারছেন না তিনি।

স্থানীয় কৃষক আল-আমিন বলেন, ‘স্থানীয় প্রভাবশালীরা সর্বদাই মাছ ধরার নামে স্রোতি জাল ও বাঁশের বেড়া পেতে বিলের পানি স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল পানিতে নিমজ্জিত হলেও কৃষকের করার কিছুই থাকে না।’

পানিতে নিমজ্জিত ধান গাছ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘যেসব ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে সেগুলো বিভিন্ন বিলম্বিত জাতের। তাছাড়া জেলার প্রায় ৯০ ভাগ জমির বোরো ধান কাটা করা হয়েছে। চলনবিল এলাকায় যেহেতু ভুট্টারও ভালো ফলন হয়, তাই সাম্প্রতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও ঝড়বৃষ্টিতে ভুট্টা নষ্ট হয়েছে। তবে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া যেহেতু বিদ্যমান, সেহেতু দু একদিনের মধ্যেই পানি শুকিয়ে গেলে কৃষকরা ভুট্টা সংগ্রহ করতে পারবে।’

উল্লেখ্য, চলতি বছর নাটোর জেলায় ৫৭ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর