‘আমার নাড়ি ছেঁড়া ধনরে আপনারা আনি দেন’

, জাতীয়

জাহিদ হাসান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর | 2023-08-18 22:29:21

'আমাগের সংসারের আর সচ্ছলতা ফিরানো লাগবে না। তুই ফিরে আই বাজান, ফিরে আই! আমার নাড়ি ছেঁড়া ধনরে আপনারা আনি দেন।’

এসব কথা বলে আর্তনাদ করে চলেছেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার খাটবাড়িয়া গ্রামের এক অভাগা মা মাহেরুন নেছা বেগম। আদরের ছোট ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে (২০) হারিয়ে অবিরাম কেঁদে চলেছেন তিনি।

লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে গত বৃহস্পতিবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে হত্যা করা হয়। তাদেরই একজন এই রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তার ডাক নাম রাকিবুল।

শনিবার (৩০ মে) দুপুরে খাটবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা ইসরাইল হোসেন ও মা মাহেনুর নেছা বেগম। ছেলের মরদেহ এক নজর দেখার আকাঙ্ক্ষায় তাদের আহাজারি যেন কিছুতেই থামছে না। এলাকার শত শত নারী পুরুষ ছুটে এসেছে তাদের সান্ত্বনা দেয়ার জন্য। চার ভাইবোনের মধ্যে রাকিবুল সবার ছোট। এ কারণে তার মৃত্যুর খবরে মা-বাবা, ভাই-বোন মুষড়ে পড়েছেন। তাদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে।

রাকিবুল

রাকিবুলের বড় ভাই সোহেল রানা বার্তা২৪.কমকে জানান, উন্নত জীবনের আশায় সাড়ে ৪ মাস আগে দেশ ছেড়েছিলেন রাকিবুল। ভালো কাজের জন্য সম্পত্তি বিক্রি আর জমানো টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে তাকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই দালালেরা তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। পরে তাকে আটকে রেখে ১৭ মে মোবাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ওই টাকা দুবাই থেকে তারা নিতে চায়। ভাইয়ের মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তারা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু তার চাচাতো ভাই লিবিয়া থেকে ফোন করে জানিয়েছেন ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে রাকিবুলও রয়েছেন।

সোহেল রানা বলেন, ‘আমরা এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। মরদেহ কবে দেশে আসবে তাও জানি না।

রাকিবুলের বাবা ইসরাইল হোসেন জানান, রাকিবুল যশোর সরকারি সিটি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। রাকিবুলের চাচাতো ভাই ফিরোজ হোসেন লিবিয়া প্রবাসী। ওই ভাই লিবিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি দালাল আব্দুল্লাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। লিবিয়ার দালাল আব্দুল্লাহ’র মাধ্যমে প্রথমে ভারত থেকে দুবাই তারপর মিশর হয়ে লিবিয়ার ত্রিপুরায় পৌঁছান রাকিবুল। এরপর রাকিবুলকে আটকে রেখে ১৭ মে মোবাইলে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে দালাল আব্দুল্লাহ।

তিনি আরও জানান, বিভিন্ন এনজিও ভিটেবাড়ি বিক্রি করে রাকিবুলের মুক্তিপণের টাকা জোগার করা হয়েছিল। আগামী ১ জুন পর্যন্ত দালালদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এর আগেই রাকিবুলকে তারা মেরে ফেলেন। এখন সরকারের কাছে তাদের দাবি- দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাকিবুলের মরদেহ যেন বাড়িতে নিয়ে আসতে পারেন।

রাকিবুলের মা মাহেরুন নেছা বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির বার্তা২৪.কমকে জানান, নিহত রাকিবুলের মরদেহ দ্রুত দেশে আনতে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর