ধস নেমেছে হিলির হস্তশিল্পের

, জাতীয়

মোসলেম উদ্দিন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, হাকিমপুর | 2023-08-31 14:27:25

কালের স্রোতে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধস নেমেছে দিনাজপুরের হিলির কুটির শিল্প ব্যবসায়ীদের। উন্নত প্রযুক্তির সামগ্রী ব্যবহারে আজ পিছিয়ে পড়েছে মাহালিদের নিজ হাতের তৈরি হস্ত শিল্পের। মানুষের প্রয়োজনের প্রায় শেষের দিকে তাদের তৈরি ডালা, কুলা চাঙারি ইত্যাদির। বাপ-দাদার কর্ম, অন্য কোন কর্ম জানি না। যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না এমনটিই জানিয়েছেন হিলি বাজারের মাহালিরা।

এক সময় হস্তশিল্পের চাহিদা ছিলো প্রচুর। মানুষের প্রায় প্রতিটি কাজে ব্যবহারে লাগতো মাহালিদের হাতের তৈরি জিনিসপাতির। হাটে-বাজারে ছিলো তার ব্যাপক চাহিদা। সংসারের সব কাজে তা ব্যবহার হতো। রাস্তা-ঘাটে মাটি কাটা কাজে ব্যবহার হতো ডালি। এখন তার আর প্রয়োজন হয় না। অত্যাধুনিক যন্ত্রদ্বারা মাটি কাটা,খাল খনন, রাস্তা বাঁধাসহ সকল কাজ করানো হয়। এক সময় হস্তশিল্পের ডালি দিয়ে এসব কাজ শ্রমিকরা করে থাকত।

হিলি বাজারে কথা হয় মাহালী শ্রী সুশান্ত দাসের সাথে সে বার্তা২৪.কমকে  বলেন, কিছু করতে পারিনি দাদা, খায়ে পড়ে কোন রকম বেঁচে আছি। এখন যা কামায় করি তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। সংসারে দুই ছেলে, এক ছেলে লেখাপড়া করে আর এক ছেলে মানুষের দোকানে কাজ করে। আগে আমাদের অনেক চাহিদা ছিলো, এখন আর তেমন চাহিদা নাই। এখন বাঁশের দাম বেশি। একটা বাঁশ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দামে কিনি। বাঁশ দিয়ে আমরা ডালা, কুলা, চাঙারি,গরুর গুমা, খলসানি ও ঝাড়– তৈরি করি। একটা বাঁশ দিয়ে দুই থেকে তিন দিন ধরে এই সব তৈরি করি এবং তা বাজারে বিক্রি করি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এতো পরিশ্রম করে স্বল্প আয়ে আমাদের পোষায় না।

কথা হয় হিলি বাজারে ডালা, কুলা সাজিয়ে বসে থাকা মাহালি দীলিপ  দাসের সাথে সে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ব্যবসা তো আগের মতো নেই দাদা, তার পর আবার করোনা প্রদুর্ভাব। হাতের তৈরি এই সব ডালা, কুলা নিয়ে বিরামপুর, ঘোড়াঘাটসহ হিলির বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি। তাতে যা লাভ হয় তাই দিয়ে ছেলে সন্তান নিয়ে কোন রকম চলি। কিন্তু করোনা আসার পর হিলি ছাড়া কোথাও যেতে পারছি না ।

একজন ক্রেতার সাথে কথা হয়, তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি একটা ঝাড়– আর ডালা কিনতে আসছি। উঠান পাকা করতে পারিনি। ঝাড়– দিয়ে উঠান ঝাড় দেওয়া হবে এবং ডালি দিয়ে ময়লা তুলে বাহিরে ফেলে দেওয়ার জন্য।

মাহালি শ্রী আশারু দাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, সকাল থেকে বসে আছি, তেমন বেঁচাকেনা নেই। বড় ডালা ৮০ টাকা, ছোট ডালা ৪০ টাকা, খলশা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝাড়– ৩০ টাকা, গুমায় ১০ টাকা ও কুলা ৫০ টাকা দামে বিক্রি করছি। আমাদের খোঁজ-খবর কেউ রাখে না। আধুনিক যুগের জিনিসপাতি ব্যবহার করে মানুষ।

এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল রাফিউল আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, করোনা প্রদুর্ভাবে হিলি গোহারা গ্রামের মাহালিদের উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে আমরা বিভিন্নভাবে কয়েকবার তাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। এছাড়াও তারা যেন কর্মহীন হয়ে না পড়ে তার জন্য করোনা চলাকালীন আমরা ঐগ্রামের মাহালিদের ১৩০ টি চাঙারি তৈরি করতে দিয়েছিলাম।

তিনি আর জানান, হিলির মাহালিদের জন্য সরকারি যেসব সুযোগ-সুবিধা আসবে তারা সেগুলো পাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর