৮৪ বছর বয়সী মনসুর মাস্টারের করোনা জয়ের গল্প

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-29 10:39:41

৩৫ দিন লড়াই করে অবশেষে করোনামুক্ত হয়েছেন রাজশাহীর মোহনপুরের ৮৪ বছর বয়সী মনসুর রহমান। রোববার (৩১ মে) বিকেলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক তাকে করোনামুক্ত ঘোষণা করেছেন।

সোমবার (১ জুন) সকাল ১০টায় মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে বিশেষ সংবর্ধনা ও আনুষ্ঠানিকভাবে করোনামুক্ত হওয়ার ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

মনসুর রহমানের বাড়ি উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের নওনগর গ্রামে। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তার এক ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন তিনি।

গত ২৬ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তারপর বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়েছেন। তিন দফা পরীক্ষা শেষে করোনামুক্ত হন তিনি।

করোনা জয়ের পর প্রতিক্রিয়া জানতে মনসুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি ৮৪ বছরের বুড়ো। তবুও যদি রোগ-শোক নিয়ে করোনা থেকে সেরে উঠতে পারি, তাহলে মনোবল থাকলে সবাই এ রোগে জয়ী হতে পারবেন। ভয় পেয়ে কোনো লাভ নেই।

মনসুর মাস্টার জানান, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁক একা একা থাকতে হয়েছে। এ বয়সে একা থাকাটা তার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে পরিবারের লোকজন, চিকিৎসক ও উপজেলা প্রশাসন এবং মোহনপুর থানার পুলিশ সব সময় তার পাশে ছিলেন। সেজন্য ভয় অনেকটা কেটে যায়।

মানুষ মানুষের পাশে থাকলে এ রোগেও কোনো ভয় নেই বলে মনে করেন মনসুর রহমান।

পরিবার ও চিকিৎসকরা জানান, মনসুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছেন। গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকেরা তাকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে (করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড) ভর্তি করেন।

এরপর তার এক্স-রে ও ইসিজি করার পর শারীরিক অবস্থা ভালো জানিয়ে ২১ এপ্রিল দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়। পরিবারের লোকজন সেদিন তাকে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর ওই বৃদ্ধের জ্বর, শ্বাসকষ্ট হলে ২৫ এপ্রিল তাকে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।

সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা তার নমুনা সংগ্রহ করে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ২৬ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

মনসুরের ছেলে আল-আমিন সরকার জালাল বলেন, বাবা এ বয়সে করোনা জয় করলেন। এটা এখন তাদের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাছে রেখে সেবা দিলে খুব সহজেই সুস্থ হয়ে যাবে বলে মনে করি।

মনসুরের পুত্রবধূ শামীমা পারভীন বলেন, আমার শ্বশুরের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমরা চরম বিপদেই পড়ে যাই। আশপাশের লোকজন তাকে বাড়িতে রাখতে দিতে চাননি। তারা বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। তাদের প্রতিবেশীরা মানসিকভাবে সব সময় তাদের তটস্থ রাখতেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও পুলিশকে জানানোর পর তারা আশপাশের লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। এমনকি চিকিৎসকেরা বাজার পর্যন্তও করে দিয়ে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার চার বছরের একটা বাচ্চা আছে। সে তার দাদুর ভক্ত। ছেলেকে নিয়ে খুব বিপদে ছিলাম। এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। এজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর বলেন, মনসুরের সুস্থ হওয়াটা অনেকের কাছে বিস্ময়কর ঠেকছে। কারণ তিনি বয়স্ক মানুষ। একেবারে দুর্বল ছিলেন। সম্ভবত তিনিই বাংলাদেশে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের একজন, যিনি এ বয়সেও করোনামুক্ত হলেন।

ডা. আরিফুল কবীর বলেন, মনসুর রহমান আগে থেকেই হৃদরোগসহ নানা অসুখে ভুগছেন। ফলে আমরা বেশ চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু তিনি সব ভয়কে জয় করে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আমরা তাকে ঘটা করেই সংবর্ধনা দেব। সবাই যাতে তাকে দেখে সচেতন হয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর