তরুণদের করোনামুক্ত রাখতে বিনামূল্যে ঘুড়ি বানিয়ে দেন শান্তু মিয়া

, জাতীয়

জিয়াউর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নেত্রকোনা | 2023-09-01 20:08:55

শান্তু মিয়া। বয়স ৬০। বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের গদাইকান্দি গ্রামে। পেশায় তিনি একজন চা বিক্রেতা। কিন্তু সম্প্রতি এলাকায় 'ঘুড়ির কারিগর' হিসেবেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি। প্রতিদিনই তরুণদের বিনামূল্যে তৈরি করে দিচ্ছেন রঙ-বেরঙের ঘুড়ি।

এলাকার তরুণরাও তাই প্রতিদিনই শান্তু মিয়ার বাড়িতে হাজির হচ্ছেন নতুন নতুন রঙিন ঘুড়ি তৈরি করে দেয়ার আবদার নিয়ে। শান্তু মিয়াও তরুণদের হাতে তার নিজের তৈরি করা ঘুড়ি তুলে দিয়ে বেশ আনন্দ পান।

এ পর্যন্ত তিনি এলাকার প্রায় তিন শতাধিক তরুণকে ঘুড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। অবশ্য এ জন্য তিনি কারো কাছ থেকেই কোনো টাকা পয়সা নেন না।

বিনামূল্যে রঙিন ঘুড়ি পেয়ে তরুণরা যেমন খুশি, তেমনি ঘুড়ি তৈরি করে তরুণদের নির্মল আনন্দের খোরাক দিতে পেরেই যেন আত্মতৃপ্তি শান্তু মিয়ার।

বর্তমানে শান্তু মিয়ার ঘুড়ির খবর এলাকা ছাড়িয়ে জেলা শহরসহ দূর-দূরান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রতিদিনই দূর এলাকার তরুণরাও ঘুড়ি নেয়ার জন্য শান্তু মিয়ার বাড়িতে ভিড় করছেন।

এ বিষয়ে শান্তু মিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারে তার একটি চায়ের দোকান রয়েছে। তেমন জমিজমা না থাকায় চা দোকান করেই তিনি সংসার চালান। তার সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে আনন্দ মোহন কলেজে মাস্টার্সে লেখাপড়া করছে।

শান্তু মিয়ার বানানো ঘুড়ি, ছবি: বার্তা২৪.কম

তিনি আরো জানান, দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস রোধকল্পে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করে। সেই থেকে সরকারি নির্দেশ মেনে বাজারের চায়ের দোকান বন্ধ করে বাড়িতে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। একদিন তিনি টিভিতে দেখেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসে যুবসমাজ আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তিনি চিন্তা করেন, কীভাবে যুবসমাজকে ঘরে আটকে রাখা যায়। কারণ তরুণরাই বেশি অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হয়ে অযথা আড্ডা দেয়। শান্তু প্রথমে তার ছেলেকে বাড়িতে ধরে রাখার জন্য একটি ঘুড়ি বানিয়ে দেন। ঘুড়ি পেয়ে তার ছেলে বাড়ির আশপাশেই সময় কাটাতে শুরু করেন। ছেলের পরিবর্তন দেখে শান্তু মিয়া এলাকার যুবসমাজকে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বানিয়ে দিয়ে নির্মল চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে শুরু করেন।

তরুণরা অনেকেই ঘুড়িতে মোবাইলের ব্যাটারি দিয়ে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করছে এবং সন্ধ্যার পর সেইসব ঘুড়ি আকাশে উড়াচ্ছে জানিয়ে শান্তু মিয়া বলেন, বিনামূল্যে ঘুড়ি বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর থেকে স্থানীয়রাসহ এখন জেলা শহর থেকেও প্রতিদিন ১২ বছরের কিশোর থেকে ৪০ বছর বয়সের অসংখ্য লোকজন আমার কাছে ঘুড়ি বানাতে আসছে। ঘরঘুড়ি, সাপঘুড়ি, টেবিলঘুড়ি, পাখিঘুড়ি ও তেলেঙ্গাঘুড়িসহ বিভিন্ন ধরনের রঙ-বেরঙের ঘুড়ি তিনি তৈরি করে দিচ্ছেন। প্রতিদিন চারটি করে ঘুড়ি তৈরি করতে পারেন বলেও জানান তিনি।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর