তাপসের কঠোর বার্তায় আশাবাদী ঢাকাবাসী

, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 01:06:03

মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একের পর এক কঠোর সিদ্ধান্তে নগরবাসীর মনে আশার আলো দেখাচ্ছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজ অসৎ কর্মকর্তারা রয়েছেন আতঙ্কে। কখন কার চাকরি যায় সেই চিন্তায় ঘুম হারাম ওই সকল অসৎ অফিসারদের।

নির্বাচনী প্রচারণায় দুর্নীতিবাজদের উইপোকা আখ্যায়িত করে বলেছিলেন নগরভবন উইপোকা মুক্ত করব। সেই পথেই হাঁটছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ১৬ মে দায়িত্ব গ্রহণের পরদিন ১৭ মে প্রথম অফিস করেন মেয়র তাপস। সেদিনেই দু’জন শীর্ষ কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতি করেন দুর্নীতির অভিযোগে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই আবার ২০ মে আরো একজন কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতি করেন একই অভিযোগে।

এরকম একের পর এক অ্যাকশনে আতঙ্কিত নগর ভবনের দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা। বিশেষ করে ডিএসসিসি’র বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও বিভাগীয় প্রধানগণের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাবেক মেয়রের আস্থাভাজন অফিসাররাই বেশি আতঙ্কে।

নির্বাচনী প্রচারণায় দুর্নীতিবাজদের ইউপোকা আখ্যায়িত করে তাপস বলেছেন নগরভবন উইপোকা মুক্ত করব

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সব সময় ভয় নিয়ে অফিস করছি। কখন কার চাকরি যায় সেই চিন্তায় আছি। নিজে যদিও কোনো লাভজনক কাজে ছিলাম না। শুধু হুকুম পালন করে সংসদীয় কমিটিতে রিপোর্ট প্রেরণ করতাম। তারপরেও কোন রোষানলে পরে কার চাকরি যায় সেটাই চিন্তার।

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, যারা সাবেক মেয়রের কাছের লোক ছিলেন তাদেরই ভয় বেশি। তারা তখন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। যে কারণে তাদের ভেতর ভয় বেশি। নতুন মেয়র দায়িত্ব নিয়েই কঠোর মেসেজ দিয়েছেন।

গত ১ জুন নগর ভবনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আবারো কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন মেয়র তাপস। বলেছেন, ‘আমি ২৪ ঘণ্টার মেয়র। যে কোন সময় যে কোন কার্যক্রম পরিদর্শনে যাবো, সে সময় স্পটে কাউকে পাওয়া না গেলে ধরে নেবেন তিনি আর ডিএসসিসিতে কর্মরত নেই। সেটা তিনি যে পর্যায়ের কর্মকর্তাই হোন’।

নগর ভবনে বোর্ড মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস

এরপর গতকাল ২জুন করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের প্রথম সভায় মেয়র তাপস বলেছেন, ‘করপোরেশনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি রয়েছে। এই দুর্নীতিকে আমি প্রশ্রয় দেব না এবং দুর্নীতির লেশমাত্র এই সংস্থায় রাখব না’।

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের এসব কথা যে শুধু কথা না তা কয়েকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকেই অনুমান করছেন ডিএসসিসি’র কর্মকর্তারা। তাই সবার ভেতরেই এক ধরণের ভয় কাজ করছে।

গতকালের বক্তব্য দিয়ে বার্তা২৪.কম এর ‘করপোরেশনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, আমি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না’ শিরোনামে একটি নিউজ করা হলে। সেই নিউজে কয়েকজন মন্তব্য করেছেন কেউ বলেছেন ‘সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত, কেউ বলেছেন এগিয়ে যান’।

মন্তব্যকারীদের একজন হুসাইন মোহাম্মদ খোকন লিখেছেন ‘এগিয়ে যান মেয়র মহোদয় আমরা ঢাকাবাসী আপনার সাথে আছে ইনশাল্লাহ’।

মুক্তা শফিক নামে একজন লিখেছেন ‘সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত’।এরকম আরো অনেকেই মন্তব্য করেছেন সাহসী নেতৃত্ব। আপনি এগিয়ে যান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন

মেয়র তাপসের অ্যাকশন নিয়ে পুরান ঢাকার বাসিন্দা ফারাবি বিন জহির বার্তা২৪.কমকে বলেন, মেয়র মহোদয় সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে মনে রাখতে হবে সিটি করপোরেশনের দুর্নীতি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং সেই সিন্ডিকেটে সরকার দলীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও জড়িত থাকে। কাজেই মেয়র মহোদয়কে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলে সেই সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে সিন্ডিকেটের প্রতিটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে সমভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, তা না হলে  তার এই পদক্ষেপের সুফল জনগণ পর্যন্ত পৌঁছাবে না ।

দায়িত্ব গ্রহণের পর নিয়মিত অফিস করে যাচ্ছেন মেয়র তাপস। কখনো আকস্মিক ভিজিটে গিয়ে মশার ওষুধের কার্যক্রম দেখছেন। আবার কখনো ফিল্ডে গিয়ে জলাবদ্ধতার বাস্তব চিত্র দেখছেন। যেখানেই যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর