ঝুপরি ঘরে দিন কাটছে অসহায় সখিনার, ভাগ্যে জোটেনি কোনো ভাতা

, জাতীয়

মো. জিয়াউর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নেত্রকোনা | 2023-09-01 19:32:46

বাঁশের কয়েকটি খুঁটির উপর দাঁড় করানো ছোট্ট একটি ঝুপরি ঘর। পুরনো ঢেউটিন আর পলিথিন দিয়ে মোড়ানো নড়বড়ে এ ঘরটিতে মানবেতর দিন কাটছে বৃদ্ধা সখিনা বেগমের।

প্রায় ৮০ বছর বয়সী এ বৃদ্ধা স্বামী-সন্তানসহ সব হারিয়ে বর্তমানে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে কোনো রকম জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছেন।

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের চকসাদক (কোনাপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা সখিনার ভাগ্যে এখনো পর্যন্ত জোটেনি বয়স্ক, বিধবা অথবা সরকারি কোনো ভাতা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সকালে সখিনা বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে তার জীবনের দুর্বিষহ কষ্টের ইতিহাস। তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর আগে স্বামী জনব আলী মারা যান। হতদরিদ্র স্বামী সখিনার জন্য শুধুমাত্র বসত ভিটেটুকু ছাড়া অন্য কোনো সহায়-সম্পদ রেখে যাননি। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র ছেলে সেলিমকে নিয়ে কোনো রকম চলছিল তার জীবন। কিন্তু ১০-১২ বছর পূর্বে সেই ছেলে একদিন কাজের সন্ধানে সিলেটে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। একপর্যায়ে সেখানকার এক নারীকে বিয়ে করেন। সিলেটে রিকশা চালালেও সেলিম অসহায় মা সখিনার খোঁজ-খবর নিতেন নিয়মিত।

বৃদ্ধা সখিনা, ছবি: বার্তা২৪.কম

কিন্তু গত দুই বছর ধরে সেলিমের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না সখিনা। একপর্যায়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে তার ছেলে একটি খুনের মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে সিলেটের কারাগারে বন্দি রয়েছেন। একমাত্র ছেলে সেলিমই সখিনা বেগমের শেষ সম্বল। সেই ছেলে বন্দি হওয়ায় পৃথিবীতে তার খোঁজ নেওয়ার আর কেউই নেই।

বৃদ্ধ সখিনা কোনো কাজই এখন আর করতে পারেন না। তাই কোনো উপায় না দেখে বর্তমানে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে জীবন চালাচ্ছেন।

সখিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, পৃথিবীতে আমার কেউ নাই। ঘর নাই। খাবার নাই। আমাকে দেখার মতো কেউ নাই। সরকারি কোনো কার্ডও নাই।

তাই সরকার যেন একটি ঘর তৈরি করে দিয়ে এবং একটি বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়ে শেষ জীবনের নিরাপত্তা দেয় সে জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন।

বৃদ্ধা সখিনার ঝুপরি ঘর, ছবি: বার্তা২৪.কম

এ নিয়ে সখিনার প্রতিবেশী যুবক মনিরুল ইসলাম ভুট্টোর সাথে কথা হলে তিনি জানান, সখিনা বেগম সত্যি চরম অসহায় ও মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। যে ঝুপরি ঘরটিতে সখিনা বাস করছেন যে কোনো সময় ঝড়-তুফানে সে ঘরটিকে উড়ে যেতে পারে। এ অসহায় বৃদ্ধা কোনো সরকারি ত্রাণ বা কোনো বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার আওতায়ও আসেননি। আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি, তাকে দ্রুত সরকারি ভাতার একটি কার্ড এবং নিরাপদভাবে থাকার মতো সরকারি একটি ঘর করে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় মাসকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সখিনা কোনোদিন আমার কাছে আসেননি। তবে স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে তাকে আমরা বিভিন্ন সময় সহযোগিতা দিয়ে আসছি। অসহায় এ বৃদ্ধাকে একটি বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতার কার্ড করে দেয়া হবে এবং ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে তাকে একটি ঘর করে দেয়ারও ব্যবস্থা করা হবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর