লকডাউন শিথিল করার পর থেকে ময়মনসিংহে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। লকডাউনে যারা গ্রামে ছিলেন তারাও শহরে ফিরছেন বেশ কয়েকদিন যাবৎ। তবে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয়েছিল সে তুলনায় জনসচেতনতা অনেক কম দেখা গেছে।
ময়মনসিংহ জেলা রেড জোনের আওতায় পড়ার পরও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা কিংবা করোনা প্রতিরোধে নিজেকে সাবধান রাখার ক্ষেত্রে উদাসীন ভূমিকায় দেখা গেছে অধিকাংশ নগরবাসীকে।
সোমবার (৮ জুন) দুপুরে সরেজমিনে নগরের গাঙ্গিনারপাড়, দূর্গাবাড়ি, ছোটবাজার, চরপাড়া, নতুন বাজার, স্বদেশি বাজার এলাকায় ঘুরে প্রচুর মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে।
এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজটেরও সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের সঙ্গে মাস্ক থাকলেও সেটি মুখে নয় পকেটে কিংবা হাতে নিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা তেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। কয়েকজন বলেছেন, গরমের কারণে তারা মাস্ক খুলে রেখেছেন। কয়েকজন আবার আনতে ভুলে গেছেন বলেও জানিয়েছেন।
সামাজিক দূরত্বও মেনে চলছে না কেউ। মার্কেট, কাঁচাবাজার, ফুটপাত সর্বত্রই মানুষ গাদাগাদি করে চলাফেরা করছে। কোনো কোনো দোকানের সামনে পণ্য কেনাকাটা করছে জটলা পাকিয়ে। দূর্গাবাড়ি এলাকায় ওষুধের দোকানগুলোতেও এমন ভিড় দেখা গেছে। একই সঙ্গে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও মানুষকে ভিড় করে বিভিন্ন পণ্য ক্রয় করতে দেখা গেছে।
এভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলতে থাকলে ময়মনসিংহের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সম্পাদক আলী ইউসুফ।
তিনি বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরু থেকে ব্যাপক তৎপরতা দেখালেও সাধারণ মানুষের মাঝে এখনো আশানুরূপ জনসচেতনতা তৈরি হয়নি। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন ভূমিকায় এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। একই সঙ্গে এবার সরকারকে কঠিন থেকে কঠিনতর ভূমিকায় এগিয়ে যেতে হবে।
সোমবার (৮ জুন) পর্যন্ত জেলায় মোট ৭১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এদের মধ্যে ৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন ও ২৩৪ জন সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ময়মনসিংহ সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৭৯ জন রয়েছেন।
এদিকে আক্রান্তের হার বাড়লেও মানুষের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতেও মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে ব্যাপক। তবে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং সবাই সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজকর্ম করছে। এজন্য ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাইরে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
মাসকান্দা আন্তজেলা বাস টার্মিনাল এবং পাটগুদাম ব্রিজ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে যাত্রী উপস্থিতি কম দেখা গেছে। রেলস্টেশনে তিস্তা এক্সপ্রেস ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস যথাসময়ে চলাচল করেছে স্টেশন কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারির মধ্যেই।
নগরের গণপরিবহন ব্যবস্থা বলতে ইজিবাইক প্রধান বাহন। এসব যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ৫টি শর্ত আরোপ করেছে। ইজিবাইক চালকরা কর্তৃপক্ষের এই ৫ নির্দেশনা মেনেই সর্বোচ্চ ৪ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক কাজকর্ম করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন এ বি এম মসিউল আলম জানান, করোনা প্রতিরোধে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে স্বাস্থ্য বিভাগ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে জেলাতে সংক্রমণের হার অনুযায়ী রেড, গ্রিন, ইয়েলো জোনে ভাগ করা হয়েছে। জেলার সর্বত্রই মাইকিং কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে এবং করোনা আক্রান্ত রোগীদেরকে যথাযথভাবে তদারকি করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩৩ জন হোম আইসোলেশনে, ৩৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ভর্তি রয়েছেন এবং ৮ জনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান জানান, করোনা প্রতিরোধে জেলার ১৩ উপজেলাতেই ক্যাম্পেইন কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। মানুষের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে পূর্বের ন্যায় প্রশাসনিক তৎপরতা এবং সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।