রাঙামাটিতে গাছ ও পাহাড় কাটছে প্রভাবশালী চক্র

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাঙামাটি | 2023-08-25 19:57:55

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা সদরের ইউএনও অফিস থেকে কয়েকশ গজ দূরে প্রকাশ্য দিবালোকে স্কুল নির্মাণের নামে অবৈধভাবে সেগুন, গামারি ও মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৩ শতাধিক গাছসহ উঁচু পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র। ভেঙে ফেলা পুরাতন বিদ্যালয়টি ছিল সেমিপাকা টিনসেট। বিদ্যালয়ের সঙ্গে ছিল ২টি পাকা ওয়াশরুম, সেগুলোও ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাহাড় কাটা মাটি নেওয়ার জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, উপজেলা সদরের পোয়াপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয়। এই বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত ৮০ লাখ ব্যয়ে টেন্ডার করেছে উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে হরিলুটে নেমেছে বিদ্যালয়ের ঠিকাদারসহ প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি। এই সিন্ডিকেট চক্রের কাছে স্থানীয় প্রশাসন অনেকটা অসহায় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে স্থানীয় ইউএনও এবং জেলা প্রশাসকের প্রদত্ত নির্দেশনা অমান্য করে প্রকাশ্য দিবালোকে এই ধরনের কর্মকাণ্ড চলে আসলেও ক্ষমতাসীন দলের হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। প্রভাবশালী এক নেতার ছেলের নেতৃত্বে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ জনপ্রতিনিধিরা মিলে সিন্ডিকেট করে সরকারি সম্পদ লুন্ঠন করে চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, চক্রটি কয়েক শতাধিক গাছ বিক্রি করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের নামে উচুঁ পাহাড় কেটে মাটিও বিক্রি করে দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জনৈক ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার ভাতিজি জামাই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্ত্রী বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষিকা। এ ছাড়া কমলপতি ইউপি চেয়ারম্যান ক্যজাই মারমার স্ত্রী মিনু মারমা এই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। ওই চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে কোনো নির্বাচন ছাড়াই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কনিষ্ট বড়ুয়া। তাদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলছে লুটপাটের মহোৎসব।

চলছে অবৈধভাবে উঁচু পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি, ছবি: বার্তা২৪.কম

পাহাড় কেটে স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভেঙে পুরাতন ভবনের মালামাল বিক্রি ও স্কুলের পুরাতন গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দিয়ে পোয়াপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উসিচিং মারমা বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ। এ কারণে আমি কিছুই জানি না।

পরিচালনা কমিটির সভাপতি কনিষ্ট বড়ুয়া জানান, গাছগুলো কে বা কারা কেটেছে তা আমি জানি না। আর স্কুলের উন্নয়নের স্বার্থে সামান্য মাটি কাটা হচ্ছে তাও ইউএনও কাউখালীর মাধ্যমে ডিসি থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, তার কমিটির মেয়াদকাল মাত্র এক বছর। আগের কমিটি বিদ্যালয়ের গাছগুলো বিক্রি করেছে।

কাউখালী উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ পেয়েছে রতন এন্টারপ্রাইজ। তবে কাজ করছেন সম্ভবত জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইপ্রু চৌধুরীর ছেলে অভিমং চৌধুরী ও আজিজ। সেখানে কিছু মাটি সমান করার কথা। কিন্তু এভাবে মাটি কাটার কথা ছিলো না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টেন্ডারে পাহাড় কাটার কথা উল্লেখ নেই এবং এ পর্যন্ত পাহাড় কাটা হচ্ছে এমনটি আমিও ভালো করে জানি না।

উপজেলা সদরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শতরুপা তালুকদারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটার সত্যতা পান। এ সময় মুঠোফোনে তিনি কোনো একজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করাকালে প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আপাতত কাজটি বন্ধ রাখার কথা বলেছি। তবে এটা মিডিয়ার সামনে আমি কথা বলতে পারবো না। মাটি কাটার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের অনুমতি আছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর