রেড জোনে থাকা খুলনা মহানগরীতে প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও জনসাধারণের মাঝে কমেছে সতর্কতা। নগরীর হাট-বাজার ও রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল যেন স্বাভাবিক সময়ের মতোই। সব স্থানেই মানুষের ভিড়, নেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি।
বুধবার (১০ জুন) সরেজমিনে নগরীর গল্লামারী ও রূপসা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব না মেনেই উপচে পড়া ভিড়ে মাস্কবিহীন ঘুরছেন অনেকে। অধিকাংশের মাঝেই নেই করোনা সতর্কতা। কেউ কেউ মাস্ক পকেটে নিয়ে ঘুরছেন।
এছাড়া করোনা প্রাদুর্ভাবের এ সময়েও নগরীর বেশ কিছু সড়কে প্রায় প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। বিশেষত নগরীর ফেরিঘাট মোড়, ডাকবাংলা মোড়, ময়লাপোতা মোড়, গল্লামারী মোড়, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড মোড় উল্লেখযোগ্য।
গল্লামারী বাজারে জাহিদ রানা নামক মাস্কবিহীন এক যুবকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পকেটেই আছে। গরমের জন্য খুলে রেখেছি। আর আমরা ইয়াং মানুষ, শরীরের শক্তি আছে করোনায় কিছু হবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘করোনায় এতো সতর্ক থাকলে আমাদের ইনকাম হবে কেমনে। আমাদের গরীবদের উপরে আল্লাহর রহমত আছে। কিছুই হবে না। একটু ব্যবসা কইরা খাই, আপনাদের (সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে) জন্য তাও পারি না। খালি আইসা ঝামেলা পাকান।’
খুলনার প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত ১৩ এপ্রিল। রোগীর সংখ্যা ১০০ অতিক্রম হতে সময় লেগেছে ৫১ দিন। গত ৩ জুন করোনা সংক্রমণ দাঁড়ায় ১২০ জনে। এরপর খুব দ্রুতই পাল্টে যায় করোনার চিত্র। ১০০ থেকে ২০০ অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ৫ দিন। গত ৯ জুন খুলনার করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২২৬ স্পর্শ করে। দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে খুলনার জনসাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানা ও বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হননি। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরবাসী বেশি অসতর্ক হতে থাকে। নগরবাসীর এ উদাসীনতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
খুলনার জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমানোর সর্বোত্তম উপায় হলো ব্যক্তিগত সতর্কতা। সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় খুলনা আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে। খুলনায় দ্রুত সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী বৃহস্পতিবার (১১ জুন) থেকে নগরীর দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ফুটপাথে কোনো হকার অবস্থান করবেন না। ইজিবাইকসহ অন্যান্য যান চলাচল সীমিত করা হবে। মানুষের ভিড়, মাস্ক ছাড়া চলাচল বরদাশত করা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাস্ক ব্যবহারের নামে নাক-মুখ উন্মুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১১ জুন হতে ২৫ জুন পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা ও কার্যক্রম বাড়ানো হবে। সন্ধ্যার পর চলাচল বন্ধ থাকবে। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান এবং জরুরি সেবা বাদে সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে।’
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, ‘শহরে এখনো বাইরে অঞ্চল থেকে মানুষ আসছে। বিভিন্ন স্থান থেকে এসে কোনো বাড়িতে সঙ্গরোধ মানছে না। যে কারণে করোনা ছড়িয়েছে অনেক দ্রুত। এ পরিস্থিতিতে খুলনার মানুষকে অধিক সচেতন হওয়া ছাড়া উপায় নাই।’