গ্রেনেড হামলা: বিচারের অপেক্ষায় রেজিয়ার সন্তানরা

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 20:07:41

রংপুর: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ গিয়েছিলেন রেজিয়া বেগম। হাজারো মানুষের ভিড়ে ট্রাকে তৈরি খোলা মঞ্চের খুব কাছ থেকে কান পেতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় প্রধানের বক্তব্য শুনছিলেন তিনি।

সমাবেশ শেষে সন্ত্রাস বিরোধী মিছিলে শামিল হবার ইচ্ছে ছিল তার। শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়া মাত্র হঠাৎ মুহুর্মুহু বিকট শব্দ। তখন ঘড়ির কাটায় বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার টার্গেট করে বিস্ফোরিত হয় একের পর এক গ্রেনেড।

দুর্বৃত্তদের ছোড়া ১৩টি গ্রেনেডের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকে লাশের পর লাশ। এ সময় নেতাকর্মী ও দেহরক্ষীদের অসীম ভালোবাসায় প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে তিনি গাড়িতে উঠতে গেলে তাকে লক্ষ্য করে ১২টি গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীরা। নারকীয় ওই হামলায় রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার রেজিয়া বেগমসহ ২২ জন প্রাণ হারান। আহত হন আওয়ামী লীগের কয়েকশত নেতা কর্মীসহ সাধারণ মানুষ।

সেদিনের ওই হামলার আজ ১৪ বছর পূর্ণ হল। মাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ রেজিয়ার সন্তানরা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের দেয়া আর্থিক সহায়তায় বর্তমানে ভালো অবস্থায় রয়েছেন। তবে মায়ের হত্যাকারীদের এখনো বিচার না হওয়ায় রেজিয়ার দুই সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই ওই নারকীয় গ্রেনেড হামলার দ্রুত বিচার চান।

রেজিয়ার বড় ছেলে হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী মানবতাবিরোধীদের বিচার হয়েছে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। ২১ আগস্ট যারা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে তাদের বিচার চাই। আমার মায়ের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’

ছোট ছেলে নুরনবী জানান, তারা পুরো পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন ওই হামলায় জড়িতদের বিচার হলেই তার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে।

রংপুরের কাউনয়া উপজেলার গঙ্গানারায়ণ গ্রামের আফাজ উদ্দিনের মেয়ে রেজিয়া বেগম ১৯৯০ সালে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসেন। ঢাকার বাড্ডা এলাকায় ইন্ডিয়ান ভিসা অফিসে ছবি লাগানোর কাজ করতেন। ভাড়া থাকতেন ওই এলাকাতেই। সেখানে মহিলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেত্রী আয়শা মোকারমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

২১ আগস্ট মহানগর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে যোগ দিতে আয়শার নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে রেজিয়া বেগমও ছিলেন। তিনি সেই দিন গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। পরের দিন তার ছোট ছেলে নুরনবী লাশ শনাক্ত করেন। পরে আজিমপুর কবরস্থানে রেজিয়া বেগমকে দাফন করা হয়। একই সালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের জন্য দেয়া হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এরপর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ৮ লাখ টাকা দেয়া হয়। এখন রেজিয়ার সন্তানরা তাদের মায়ের হত্যার বিচার চান।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর