মেস ছাড়তে রাজশাহী এসে জঙ্গি সম্পৃক্ততায় গ্রেফতার রাবি ছাত্র

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-28 10:02:34

রাজশাহী গোদাগাড়ীর জঙ্গি আস্তানায় গোপন বৈঠকের সময় র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার আনসার আল ইসলামের চার সদস্যের মধ্যে একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান (২১)।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি বগুড়ার শাহজাদপুর উপজেলার পলিপলাশ গ্রামে। বাবার নাম ইয়াসিন আলী।

শুক্রবার (১২ জুন) থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। বিভাগের শিক্ষকরা পরিবারের মাধ্যমে অবগত হয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করছিলেন।

এর মধ্যেই রোববার (১৪ জুন) দুপুরে র‌্যাব-৫ এর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা গোদাগাড়ী উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে আব্দুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। র‌্যাব জানায়- তারা আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জঙ্গি অস্তানায় অভিযানে চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

রাবির ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেজাউর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার আব্দুর রহমানের বাবা আমাকে ফোন করে তার সন্তান নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানান। ওই দিন রাতে শাহজাহানপুর থানায় জিডি করতে বলি। তিনি জিডিও করেন।’

আনসার আল ইসলাম’র সক্রিয় চার সদস্য গ্রেফতার

পরিবারের বরাত দিয়ে অধ্যাপক রেজাউর রহমান জানান, আব্দুর রহমান ও তার ছোটভাই রাকিব হাসান বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরে শফিউদ্দিন ছাত্রাবাসে ভাড়া থাকতেন। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর থেকে রহমান বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সার্টিফিকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নেয়া এবং মেস ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহীতে আসেন আব্দুর রহমান।

আব্দুর রহমানের ছোটভাই আব্দুর রাকিব প্রতিবেদককে জানান, বৃহস্পতিবার যখন তার ভাই রাজশাহীতে আসেন, তখন বাড়িতে বলে এসেছিলেন- শুক্রবার দুপুরে তিনি আবার বাড়িতে ফিরে যাবেন। তবে শুক্রবার দুপুর পেরিয়ে গেলেও বাড়িতে না যাওয়ায় তাকে ফোন করেও মোবাইল বন্ধ পান তারা।

তিনি আরও বলেন, ‘সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও ভাইয়ের ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম। তাই তার বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিতে শুরু করি। কিন্তু কেউ রাজশাহীতে নেই জানিয়ে শিক্ষকদের জানাতে বলেন। আমরা পরে শিক্ষকদেরকে বিষয়টি অবগত করি। তারা জিডি করতে পরামর্শ দেয়ায় শাহজাহানপুর থানায় প্রথমে জিডি করি। অন্য আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে না পেয়ে শনিবার আমি, বাবা এবং মামা রাজশাহীতে যাই।’

আব্দুর রাকিব বলেন, ‘আমরা রাজশাহীতে গিয়ে মতিহার থানায় গিয়ে ভাইয়ের নিখোঁজ বিষয়ে জিডি করি। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ছিলেন। জিডি করে আরও খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সন্ধ্যার পর বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হই। আমার বাবা একজন কৃষক। নিজস্ব জমিজমাও নেই। আমরা দুইভাই রাজশাহীতে এক মেসে থেকে পড়াশোনা করি, অনেক খরচ। আমার ভাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। কিন্তু কোনো দিন কোন দল বা সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে দেখিনি।’

আব্দুর রহমানের বাবা ইয়াছিন আলী বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভাল। কখনও রাজনীতি করে না। আমার ছেলে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত এটা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমাকে গোদাগাড়ী থানা থেকে ফোন করে ডাকা হয়েছে। আমি এখন রাজশাহীর পথে রওয়ানা করেছি।’

র‌্যাব-৫ এর কোম্পানী অধিনায়ক এটিএম মাইনুল ইসলাম বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেফতার চার জঙ্গি পরিত্যক্ত একটি বাথানবাড়িতে গোপন বৈঠক করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বইও উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর