মেঘনার ভাঙনে হুমকিতে শতবর্ষী বাজার

, জাতীয়

আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | 2023-08-25 00:57:09

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে প্রতিনিয়ত ঘরবাড়ি দোকানপাট হারিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। হুমকির মুখে পড়েছে নদী তীরবর্তী শতবর্ষী চাতলপাড় বাজারসহ বেশ কিছু এলাকা। এরইমধ্যে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ও বসত বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। জমি ও ভিটা হারিয়ে নদী তীরবর্তী লোকজন আশ্রয় নিয়েছে অন্য এলাকায়।

চাতলপাড় ভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েকদিনে মেঘনায় পানি বেড়েছে। চাতলপাড়ের আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় ইট ভাটা ও অপরিকল্পিত বাঁধ দেওয়ায় মেঘনা নদীর পানি মোড় নিয়েছে। এ কারণে চাতলপাড় বাজারের অংশে ব্যাপক পরিমাণে আঘাত লাগে। ফলে এই বাজারসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

পাশাপাশি অবৈধভাবে নদীতে ড্রেজিং করার ফলে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হয়ে এই ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসীর।

মসজিদের কয়েকটি পিলারের মাটি নদী গর্ভে েচলে গেছে

ভাঙন এলাকায় নদীর পানির গভীরতা প্রায় ১৩০ থেকে ১৫০ ফুট। এরইমধ্যে নদীর তীরবর্তী বাজারের ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও চাতলপাড়ের ৫০-৬০টি বসতভিটা, বিলেরপাড়ের ১০-১২জনের বসতভিটাসহ জায়গা, পূর্বদিকের অন্তত ৪০-৫০জনের তিন শতাধিকের বেশি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে চাতলপাড়, চকবাজার ও বিলেরপাড়ের আরও শতাধিক ভবন, মসজিদ ও মাদরাসা। বিলেরপাড় জামে মসজিদের চারটি পিলারের নিচের মাটিও নদীতে চলে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে মসজিদটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।

চাতলপাড় এলাকার মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘চাতলপাড় বাজারের পাশের মসজিদের উত্তরদিকের একটি অংশে প্রতি বছর মাহফিল হতো। সেখানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতো। সেই জায়গাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে মসজিদটিও এখন হুমকির মুখে।’

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মো. রাজ্জাক মিয়া বলেন, ‘ঘরবাড়ি মেঘনায় বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখন অন্য এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার পাশাপাশি নদী ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।’

জমি ও বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র গেছেন অনেকে

চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আহাদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘তাৎক্ষণিক বালুভর্তি বস্তা ফেলে রক্ষার জন্য চেষ্টা করা হলেও ভাঙন রোধ হচ্ছে না। যাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে তাদের আবার বাড়ি করার মত সামর্থ্যও নাই। তাই সরকারের কাছে আমার দাবি যেন দ্রুত নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিয়ে শতবর্ষী এই বাজার ও এলাকাটিকে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করা যায়।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রঞ্জন কুমার দাস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ভাঙনরোধে ইতোমধ্যে জরুরিভাবে ২ হাজার বালুভর্তি ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এছাড়া ১২০ কোটির টাকার ২ দশমিক ২ কিলোমিটার স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ এবং এবং নদীর মাঝে জেগে ওঠা ৮৮০ মিটার চর অপসারণের প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর